সংস্কৃতি/ক্রিড়া

কানাডাকন্যা অগ্নিলার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে মনোনয়ন
মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৪ এর প্রথম পর্বে সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেয়েছেন টরন্টোকন্যা অগ্নিলা ইকবাল। মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘লালখাম বনাম নীল খাম’ অভিনয়ের জন্যে অগ্নিলা এই মনোনয়ন পেলেন। ভালোবাসা দিবসে এই নাটকটি এনটিভিতে প্রচার হয়। এই নাটকে সহশিল্পী ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। একই ক্যাটাগরিতে আরো মনোনয়ন পেয়েছেন অপেক্ষা নাটকে অভিনয়ের জন্যে তিশা ও ভালোবাসার দ্বিতীয় গল্প নাটকে অভিয়ের জন্যে ফারহানা মিলি। মনপুরাখ্যাত পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘বিপ্রতীপ’ নাটকের মাধ্যমে ২০০১ সালে অভিনয় শুরু করেন অগ্নিলা। এরপর পরিবারের সঙ্গে প্রায় একযুগ আগে কানাডায় অভিবাসী হন। মেধার স্বাক্ষর রাখেন অগ্নিলা কানাডাতেও। কানাডার হায়ার স্কুল ডিগ্রী ওএসডিডি’তে ভাল রেজাল্টের জন্য ‘কুইন এলিজাবেথ এইম ফর দ্য টপ স্কলারশিপ’ এবং কানাডা সরকার থেকে ‘অন্টারিও স্কলার অ্যাওয়াডর্’ অর্জন করেন। ২০০৬ সালে ভর্তি হন বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো আন্তজার্তিক উন্নয়ন বিভাগে। কানাডার প্রবাসী জীবনেও অগ্নিলা পড়াশোনার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চায় জড়িত ছিলেন। নীলিমা ইব্রাহীমের ‘আমি বীরাঙ্গনা’ অবলম্বনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকের প্রধান চরিত্র শেফালী চরিত্রে অভিনয় করেন অগ্নিলা। দেশে ফিরে আবার অভিনয় শুরু করেন ২০১২ সালে। কিছুদিন আগে গ্রামীণ ফোনের একটি বিজ্ঞাপনে মডেলিং করে আবারও আলোচনায় চলে আসেন। এই এ্যাডফিল্মে অগ্নিলার সঙ্গে কাজ করেছেন নাঈম। সম্প্রতি সেভেন আপ পানীয়র বিজ্ঞাপনেও মডেল হয়েছেন অগ্নিলা। ঢাকার বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কের বিলবোর্ডে শোভা পাচ্ছে তার ছবি। টিভিতে চলছে বিজ্ঞাপনচিত্র।
সূত্রঃ বেঙ্গলি টাইমস

=============
শিল্পকলায় নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ 
শিল্পকলায় শুরু হচ্ছে নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ প্রদর্শনী আগামী ২৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ব্রাত্য চলচ্চিত্রের যৌথ উদ্যোগে সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণএর প্রদর্শনী শুরু হতে যাচ্ছে। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে চলচ্চিত্রটি। এরপর পরই সারাদেশের প্রতিটি জেলা শহর থেকে উপজেলা সহ প্রতিটা জায়গায় চার মাসব্যাপী রোড শো সহ চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী হবে। ইতিমধ্যে চলচ্চিত্রটির গান ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভিন্নধর্মী নির্মাণের জন্য চলচ্চিত্রটি সমালোচক ও চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের ব্যপক প্রশংসা অর্জন করেছে। নানা কারণে চলচ্চিত্রটি সারা দেশের সিনেমা হলে প্রদর্শিত করতে না পারায়, দেশব্যপী দর্শকদের আগ্রহের প্রতি সম্মান জানিয়ে ব্রাত্য চলচ্চিত্র বিকল্প পদ্ধতিতে সারাদেশের দর্শকদের কাছে চলচ্চিত্রটি পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশুদ্ধ দেশী চলচ্চিত্রপ্রেমীদের এজন্য অপেক্সা করতে হবে, আর কিছু দিন। নেকাব্বর আসছে আপনার শহরে।


শাহ আবদুল করিম : মাটি ও মানুষের সম্রাট
সাইফ বরকতুল্লাহ

১৯৮০ সাল। শ্রাবণ মাসের শুরু। সেই সকালের রোদ ঝলমলে হাওরের পানি ঝিকিমিক করছিল। একটি নৌকায় করে উজানঢলে যাচ্ছিলেন। নৌকায় ছিলেন বাউল স¤্রাট শাহ আবদুল করিম-এর শিষ্য রুহি ঠাকুর। নৌকায় ভ্রমণের সময় তিনি রচনা করেন-
‘বসন্ত বাতাসে সই গো
বসন্ত বাতাসে
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
আমার বাড়ি আসে সই গো বসন্ত বাতাসে...।‘
হ্যাঁ, প্রিয় পাঠ, এমনি গানের সষ্ট্রা শাহ আব্দুল করিম। হাওর-বাঁওড়-খাল-বিল ও নদী নালার দেশ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধলআশ্রম গ্রামে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইব্রাহীম আলী, মার নাম নাইওরজান বিবি। ভাটির নিজস্ব পরিবেশ ও প্রকৃতি এখানকার মানুষদের করে তোলে ভাবুক, বাউলা। শাহ আবদুল করিমও তাদের মধ্যে একজন। কৃষি-মজুর অভাবী পরিবারে তাঁর জন্ম। অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি জয়ী হয়েছেন। সংসার ত্যাগ করে শাহ আবদুল করিম একতারা হাতে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করেন। তিনি হয়েছেন বাউল। অমর কীর্তি দিয়ে তিনি মানুষের মনের স¤্রাট হয়েছেন। তাই বাউল ভক্তরা তাঁকে বাউল স¤্রাট উপাধিতে ভূষিত করেছেন। আজ ১২ সেপ্টেম্বর বাউল স¤্রাট শাহ আবদুল করিমের মৃত্যু দিবস। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চলে যান না ফেরার দেশে।
শাহ আব্দুল করিমের জীবন পর্যালেচনা করলে দেখা যায়, ৫২র ভাষা আন্দোলন, ৫৪র নির্বাচন, ৬৯র গণআন্দোলন, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি পর্যায়ে স্বরচিত গণসঙ্গীত পরিবেশন করে জনতাকে দেশ মাতৃকার টানে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করেছেন। গানের জন্য ২০০৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
দরিদ্রতা ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি তাঁর গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে।
ষাটের দশকে বিলেতের আর্থিক স্বচ্ছলতার হাতছানি ও বিত্তের মোহকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাউল স¤্রাট শাহ আবদুল করিম তার ধ্যানের আকাশ কালনী নদীর তীরের দিরাই উপজেলার ছায়াঘেরা উজানধল গ্রামকেই  বেছে নিয়েছিলেন। নব্বই দশকে আর্থিক অনটনের মাঝেও নিজ ভিটায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শাহ আবদুল করিম সঙ্গীতালয়
শাহ আবদুল করিমের বিত্তের কোন মোহ ছিলনা। তার কাছে চিত্তের সুখ ও ধ্যানজ্ঞান ছিল গান। গান দিয়ে জয় করেছেন সকল বাঙ্গালির মন ও মনন। তার স্বপ্ন ছিল তার গানসহ বাংলার সকল লোককবিদের গান বাণী ও সুর অবিকল রেখে তার শীষ্যরা পরিবেশন করবে।
শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় কিছু গান:
১। বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে
২। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
৩। গাড়ি চলে না
৪। আমি কূলহারা কলঙ্কিনী
৫। কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া
৬। বসন্ত বাতাসে সইগো।
বাউল শাহ আবদুল করিমের এ পর্যন্ত ৬টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হলো- আফতাব সংগীত, গণ সংগীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে এবং ধলমেলা। বাংলা একাডেমি তাঁর দশটি গানের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে।

---------------
চলে গেলেন ফিরোজা বেগমঃ
স্মৃতির কপাট খুলে খুলে সাজাই তোমায় ফুলে ফুলে

---------------------------------
চিরদিনের জন্য চলে গেলেন ফিরোজা বেগম। কীভাবে তাকে উপস্থাপন করব? কীভাবে ব্যাখ্যা দেব এই ফিরোজা বেগমকে? গানের পাখি? নাকি নজরুল সঙ্গীতের সম্রাজ্ঞী, নাকি উপমহাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী? মাত্র ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি যার প্রথম রেকর্ড বের করেছিল, সেই শিশুশিল্পীই পরে নজরুলসঙ্গীতের শিল্পী হিসেবে ভারত উপমহাদেশে খ্যাতি লাভ করেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্য পেয়েছেন ফিরোজা বেগম। চেষ্টা, নিষ্ঠা আর সততার গুণে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন নজরুলসঙ্গীতের সম্রাজ্ঞীর আসনে। নজরুলসঙ্গীতের শিল্পী হলেও তিনি হিন্দি এবং আধুনিকও গান গাইতেন।
আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে, তিনি আমার লেখা একটি গান করেছিলেন বাংলাদেশ বেতারে। বেতার ও টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত গীতিকার থাকার সময় বেশ কিছু গান দেশের খ্যাতিমান সুরকারের মাধ্যমে বিখ্যাত শিল্পীদের কণ্ঠে তা স্থান পেয়েছিল। তাদের মধ্যে ফিরোজা বেগম একজন।
শ্রদ্ধেয় সুরকার সুজেয় শ্যামের মাধ্যমেই আমার ফিরোজা বেগমের সংস্পর্শে আসা। মাঝে মাঝেই তিনি আমাকে গান লিখতে তাগিদ দিতেন। সে সময় আমি দাদার বাসায় বসেই লিখলাম স্মৃতির কপাট খুলে খুলে সাজাই তোমায় ফুলে ফুলেগানটি।
দাদা গানটি সুর করে তুলে দিলেন ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে। হোম সার্ভিসে তা রেকর্ড হয়। পরে অবশ্য সেই গানটি নিলুফার ইয়াসমিনও গেয়েছিলেন। আজ তার গাওয়া সেই গান দিয়েই তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছি।
ফিরোজা বেগম তখন থাকতেন ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে। দাদা বললেন, চলো যাই। গানটা তুলে দিয়ে আসি। কিন্তু আমার যাওয়া হয়নি। পরে রেডিও অফিসে রেকর্ডিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলাম। তখন বার বার মনে পড়ছিল- এ ভাবে তিনি নজরুলের, কমল কুমারের গান রেকর্ডিং করতেন। কী সৌভাগ্য আমার!
এখানে বলে রাখা ভালো, সুজয় দা পরে ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসের জন্য একুশের গান করবেন। হঠাৎ তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন- স্মৃতির কপাট খুলে খুলে সাজাই তোমায় ফুলে ফুলেগানটি তো শহীদদের উদ্দেশেও হতে পারে। একারণে পরে আবার গানটি তিনি নিলুফার ইয়াসমিনকে দিয়ে গাওয়ালেন!
ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ জমিদার পরিবারে। তার বাবা ছিলেন- খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল। সেই সম্ভ্রান্ত জমিদার-খান বাহদুরের পারিবারিক ঐতিহ্যের বৃত্ত ভেঙে বিয়ে করেছিলেন বিরলপ্রজ সুরকার কমল দাশগুপ্তকে।
একবার তারাকালোকের জন্য নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করেছিলাম- কীভাবে সেই সময়ে ভিন্ন ধর্মের ছেলেকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, কেন নারীবাদী গন্ধ পাও? পরে বলেন, আসলে গান-ভালোবাসা-কমল কুমার সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
তার ছেলে হামিন ও শাফিনের গান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, ‘ওরা ব্যান্ডের গান করলেও ওরা গানের আসল বিষয়টা শিখেছে। আর ওরা তো ওদের মতো করেই গাইবে, গাচ্ছে। আমি খুশি। এই যে তোমার একটি গান করেছি। এটাও আমার সৌভাগ্য!তার সেদিনের মন্তব্যে আমি থমকে গিয়েছিলাম।
ফিরোজা বেগমের ছোট ছেলে শাফিন আমার বন্ধু মানুষ। শাফিনও আমার দুটি কবিতা থেকে গান করেছেন। সেই সূত্র ধরে দুয়েকবার তাদের বাসায় যাওয়া হয়েছে আমার। সেও অনেক দিন আগের কথা। তখন আমাদের বন্ধু মাকসুদুল হক নানান সমস্যার জালে আটকানো। শাফিনের বাসায় সেই জটিলতা সমাধানে আমরা মিটিংয়ে বসি।
সেই দিনই শেষ দেখা হয়েছিল ফিরোজা আপার সঙ্গে। এমনিতেই ফিরোজা আপাবলেই ডাকতাম। সেদিন শাফিনের খাতিরে হঠাৎ খালাম্মাডাকি। তিনি খুব মজা পেয়ে বললেন- আজ শাফিনের সৌজন্যে আপা থেকে খালাম্মা! আমি তখন কিছুটা বিব্রত এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। এর পর দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে থাকার কারণে তার সঙ্গে দেখা হয়নি আমার। কিন্তু নিয়মিত খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করেছি।
গতকাল রাতে তিনি কূলপ্লাবি পূর্ণিমার রাতে জোছনার দেশে চিরদিনের চলে গেছেন। তাই মনে পড়ছে এ রকম টুকরো টুকরো কথা,টুকরো টুকরো স্মৃতি। সেই স্মৃতির কপাট খুলে খুলে/ সাজাই তোমায় ফুলে ফুলে
*বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে
========
মন্ট্রিয়লের মাতাল হাওয়ায়,কথায় কথায় রাত হয়ে যায়
লুৎফর রহমান রিটন

কানাডার নিস্তরঙ্গ প্রবাস জীবনে আমার বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশি নয়। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডা। সেই হিশেবে কানাডাজুড়ে আমার বন্ধুর সংখ্যা বিপুল হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। কানাডা তো আর ফেসবুক নয় যে পাঁচ হাজার বন্ধু থাকবে। তবে আমি আমার সীমিত সংখ্যক বন্ধু নিয়ে সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে’ ভালোই আছি। অটোয়া ছাড়াও কানাডার নানা প্রভিন্সে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমার বন্ধুরা। অটোয়া থেকে দুঘন্টার ড্রাইভ-দূরত্বের মন্ট্রিয়লেও আমার কিছু বন্ধু আছে। সেই বন্ধুদের সান্নিধ্যের প্রলোভনে পড়ে মাঝেমধ্যেই মন্ট্রিয়ল চলে যাই আমি। এই তো সেদিন২২ আগস্ট বিকেলে চলে গিয়েছিলাম সেখানে। দুতিনটে অসাধারণ রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিবস আর অপরূপ মদিরাসুষমারঞ্জিত ঝিঁঝিঁডাকা গাঢ়তমিস্রঘন রাত্রির কোলাহল গায়ে মেখে অটোয়া ফিরে এসেছি।

মন্ট্রিয়লের স্মৃতির পাতা উল্টাতে গেলে সবার আগে যে স্মৃতিটা সামনে এসে দাঁড়ায় সেটা ২০০৪ সালের। মন্ট্রিয়ল নিবাসী পারকেশন আর্টিস্ট বাবলু এক বিকেলে ফোন করে বললো-- তোমার সঙ্গে কথা বলবে এন্ড্রু দা। ফোনের অপর প্রান্তে বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের হিরন্ময় কণ্ঠ--অনেকদিন দেখি না তোমাকে। পারলে চলে আসো। দুটো দিন একসঙ্গে কাটাই।

সত্যি বলতে কি--বন্ধু এন্ড্রু কিশোরের এরকম আন্তরিক আহবানে হৃদয় আমার ব্যাকুল হয়ে উঠলো। কাজ থেকে জরুরি নোটিশে ছুটি মঞ্জুর করিয়ে পরের দিন চলে গেলাম শৈল্পিক রসে ধুসর শহর মন্ট্রিয়লে।বহুদিন পর এন্ড্রুর সঙ্গে দেখা হলো। বহুদিন পর তাঁর গান শুনলাম সরাসরি। সেবার ঢাকা থেকে আঁখি আলমগীরও এসেছিলো। সন্ধ্যায় রিহার্সাল রুমে আঁখি আমাকে দেখে এবং আমি আঁখিকে দেখে হইহই করে উঠলাম। ছোট্ট আঁখি ওর মা খোশনূর আলমগীরের সঙ্গে বইমেলায় আসতো। তারপর আমার আঙুল ধরে হাঁটতো মেলার এইপ্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত। সেই আঁখি কতো বড় হয়ে গেছে! কতো বিখ্যাত হয়ে গেছে! অডিটোরিয়াম জুড়ে সুন্দরী আঁখির ভক্তের সংখ্যাও দেখলাম বিপুল। এন্ড্রুর সঙ্গে আঁখি একটা ডুয়েট গাইলো--''সব সখিরে পার করিতে নেবো আনা আনা/তোমার বেলায় নেবো সখি তোমার কানের সোনা সখি গো আমি প্রেমের ঘাটের মাঝি/তোমার কাছে পয়সা নেবো না...।'' মঞ্চে চাচা-ভাতিজি এন্ড্রু-আঁখি 'প্রেমিক-প্রেমিকা'র কী অসাধারণ পারফরম্যান্সই না করলো! দেখে তো আমি মুগ্ধ হবোই।
এলিজাবেথ হোটেলের প্রশস্ত কক্ষে দু'দুটো নির্ঘুম রাত এন্ড্রুর সঙ্গে গল্পে আড্ডায় কোনদিক দিয়ে চলে গেলো টেরও পেলাম না। সকালে এন্ড্রুরা ফিরে গেলো। আরো একটা দিন আমার রুম বুকিং দেয়া আছে। আমি সারাদিন ভিনদেশী পর্যটকের মতো ঘুরে বেড়াবো শহরটার এমাথা ওমাথা। তারপর রাতে হোটেলকক্ষে ঘুমিয়ে পরদিন ফিরে যাবো নিজের শহরে। কিন্তু সকাল এগারোটার দিকে সেই হোটেল লবীতে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলো অনুজপ্রতীম কবি ও আঁকিয়ে রাকিব হাসান। রাকিব আমার খুবই প্রীতিভাজন। ওর স্ত্রী নাহার মনিকাও একজন লিখিয়ে। গল্প লেখেকবিতা লেখে। মনিকাও আমার বিশেষ স্নেহভাজন। রাকিব বললো--চলেনবাসায় চলেন। আমি বললাম--আমার তো এই হোটেলে রুম বুকিং দেয়া আছে আগামীকাল পর্যন্ত। রাকিব বললো--না। আপনি বাসায় চলেন। রুম থেকে লাগেজ নিয়া আসেন। আমি বললাম--মনিকা আর চারণ-চিত্রণকে না দেখে আমি যাবো না ঠিকই। কিন্তু লাগেজটা থাকুক না এখানেই।

রাকিবের সঙ্গে একজন সাংবাদিক ছিলো। রাকিব সেই সাংবাদিককে বললো--দামি হোটেলের আরাম আয়েশ ছেড়ে রিটন ভাই আমার বাড়িতে কষ্ট করে থাকতে যাবেন না আমি জানতাম। স্পষ্ট অভিমান ছিলো ওর কণ্ঠে। ওর সঙ্গী সাংবাদিকটিও বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়লো। যার অনুবাদ--আমিও জানতাম। এমনটাই হবে।

সময়টা অক্টোবর ছিলো। বাইরে প্রচণ্ড শীত আর বরফের ছোবল। রুম থেকে জ্যাকেটটা গায়ে জড়িয়ে আসি বলে হোটেল লবিতে ওদের বসিয়ে এলিভেটরে চেপে তিনতলায় গেলাম। তারপর খুব দ্রুতই নেমে এলাম নিচে। কাউন্টারে চাবি জমা দিয়ে হ্যান্ড লাগেজ টানতে টানতে রাকিবের সামনে আসতেই শিশুর সরল-নিষ্পাপ হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো রাকিবআপ্নে পাল্টান নাই রিটন ভাই!আমি বললামদামি হোটেলের গুল্লি মারি। তারপর হাসতে হাসতে গিয়ে বসলাম ওর গাড়িতে। সারাদিন সারারাতের দীর্ঘ আড্ডা আর বিস্তর খানাখাদ্যের পর খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম রাকিব-মনিকাদের ছোট্ট এক বেডের এপার্টমেন্টের লিভিংরুমের ফ্লোরে।রাকিবদের ছোট্ট দুই রাজকন্যার সঙ্গে আমার খুব ভাব হয়ে গেলো। আমি বরিশাইল্লা এক্সেন্টে জিজ্ঞেস করি--অ মনু ডাইলে লবণ দ্যাছোদুই রাজকন্যা হাসতে হাসতে গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন দুই রাজকন্যা আমাকে দেখলেই বলতো--অ মনু ডাইলে লবণ দ্যাছোতারপর হিহিহি হিহিহি।

এরপর রাকিবরা বাড়ি পাল্টেছে। ওদের বেডরুমের সংখ্যাও বেড়েছে। আমি মন্ট্রিয়ল গেলে ওদের টুইন কন্যা চারণ-চিত্রণের বেড রুমটি আমার জন্যে বরাদ্ধ হয়ে যায় এখন। ছোট্ট চারণ-চিত্রণ ধাঁই ধাঁই করে বড় হয়ে যাচ্ছে!

২০০৯ সালের মধ্য জুনে মন্ট্রিয়লে নিজের একটা গ্যালারি বা স্টুডিও উদ্বোধনের আয়োজন করেছিলো রাকিব-মনিকা জুটি। রাকিবের একক চিত্রপ্রদর্শনীর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিলো স্টুডিও উঠান। সেই অনুষ্ঠানে টরন্টো-অটোয়া-মন্ট্রিয়ল ছাড়াও নিউইয়র্ক থেকে এসেছিলেন সাহিত্য ও শিল্পানুরাগী একগুচ্ছ উজ্জ্বল-উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত নারীপুরুষ। চিত্রপ্রদর্শনীর পর অতিথিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো মন্ট্রিয়লের বিখ্যাত পার্ক বোয়া দ্য লিয়েজ-এর চমৎকার একটা কটেজে। সেখানে অতিথিদের জন্যে অপেক্ষা করছিলো দুরাত দুদিনের প্রায় নির্ঘুম অরন্যবাস’-এর আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। হইহুল্লোড় আড্ডায়-পানে-গানে-ফানে দুটোরাত দুটোদিন কোন দিক দিয়ে কেটে গেলো আমরা টেরই পাইনি। সেই থেকে শুরু আমাদের বাৎসরিক অরন্যবাস। অরণ্যেআবার অরণ্যেউঠান থেকে অরন্যে ইত্যাদি শিরোনামে এ পর্যন্ত পাঁচটি আড্ডা হয়েছে মন্ট্রিয়লে। ভ্যেনু সেই বোয়া দ্য লিয়েজ-এর দোতলা কটেজ। যার সামনে পেছনে অজস্র বৃক্ষ আর পত্রপল্লবের কোলাহল মিশ্রিত সবুজ গন্ধমাখা আলো আর ছায়ার অপরূপ বিন্যাস। যেখানে আমাদের 'অরণ্যের দিনরাত্রি'গুলো আশ্চর্য এক মাদকতা মেশানো হুল্লোড় নিয়ে জেগে থাকে।

প্রবাসের ছকেবাঁধা একঘেঁয়ে জীবনটা পানসে হয়ে যায় অজান্তেই। তখন সেই পানসে হয়ে যাওয়া জীবনে নতুন কিছু মরিচ-তেঁতুল আর গুড়ের মিশেল দিতে হয়। নতুন স্বাদের সৌরভে জীবনটা তখন অনেক টেস্টি হয়ে ওঠে। রাকিবদের পঞ্চম আড্ডায় শামিল হতে গত ২২ আগস্ট তাই তো গিয়েছিলাম প্রিয় মন্ট্রিয়ল শহরে। ২২-২৩-২৪ আগস্টের শুক্র-শনি-রবি এই তিনদিনের মন্ট্রিয়ল নিবাস আমাদের নিস্তরঙ্গ প্রবাস জীবনে সঞ্জীবনী সুধা ঢেলে দিয়েছে। মন্ট্রিয়লের ব্যোয়া দ্য লিঁয়েজে পার্কের বিশাল সেই কটেজটা এবারও ভাড়া করে রেখেছিলো মনিকা-রাকিবরা। ওখানে অটোয়া-টরন্টো-মন্ট্রিয়লের আড্ডাবাজদের সঙ্গে আমেরিকা থেকেও যুক্ত হয়েছিলেন কতিপয় আড্ডারু। প্রতিবারের মতো এবারো এই আড্ডায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিলেন কথাশিল্পী জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এবং তাঁর স্ত্রী পূরবী বসু।এরা দু'জন এই আড্ডার অলিখিত সভাপতি। সকলের মান্যজন। এবারের আড্ডার নাম ছিলো 'উঠান থেকে অরন্যে। আড্ডায় আড্ডায়,গল্পে-কবিতায়,-গানে গানেপানে পানেআর ফানে ফানে কোন দিক দিয়ে যে দিন গড়িয়ে রাত নেমেছে আর রাত পেরিয়ে ভোর হয়েছে তা টেরই পাওয়া যায়নি। শনিবার রাতটি ছিলো 'সুরে ও বাণীর মালা দিয়েগাঁথা। নজরুল গীতির তারকা শিল্পী ফেরদৌস আরা ব্যাক্তিগত কাজে টরন্টোতে ছিলেন। তিনিও এসে শামিল হলেন সেই আড্ডায়। তাঁর আগমনে আমাদের বোয়া দ্য লিয়েজ পার্কে নতুন একটা ফুল যেনো ফুটে উঠলো সহসা। বাংলা সিনেমার স্নিগ্ধ নায়িকার মতো দেখতে রূপসী এই গায়িকার কণ্ঠসুধা আমরা উপভোগ করেছি মধ্যযামিনী পেরিয়ে বলা চলে ভোর পর্যন্ত। ফেরদৌস আরা বড় শিল্পী। বড় শিল্পীর বড় মনের পরিচয় পেয়েছে সবাই সেই রাত্রিতে। অসীম ধৈর্য তাঁর। মাইক্রোফোনে গোলযোগ দেখা দিয়েছিলো তাঁর পরিবেশনার সময়টাতেইএকাধিকবার। তিনি কোনো রকম বিরক্তি প্রকাশ না করেই পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন। তিনি গাইলেন--লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া মজনু গো আঁখি খোলোএকি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে ওগো বন্ধু কাছে থেকো কাছে থেকো। আমার অনুরোধে গাইলেনকুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া কুহরিলো মহুয়া বনে মহুয়া বনে। আহা! ঝিঁঝিঁ ডাকা নিকশ আঁধারে আমাদের সেই ঘন অরণ্যে মহুয়ার নেশা ধরানো সেই গান। গানের পর্ব শেষ হলে সবাই যখন ডিনার সারছে তখন সেহরী টাইম। ঘড়িতে সময় ভোর চারটা! ফেরদৌস আরার আগে মন্ট্রিয়লের তিনকন্যা রুমা-অনুজা আর সোমার গানেও মুখর ছিলো পরিবেশ। বিশেষ করে সোমার রবীন্দ্রসঙ্গীত সবার মন ভরিয়ে দিয়েছিলো। গেলোবার ওকে ওর বাড়ি থেকে আনতে গিয়েছিলাম রাকিবের সঙ্গে। রাকিবের কাছেই জেনেছিলাম মেয়েটি সন্তান সম্ভবা। সে কারণেই ওকে আনতে যাওয়া। প্রেগনেন্ট মেয়েদের প্রতি আমার বাড়তি একটা মায়া এবং শ্রদ্ধা থাকে। এবার সঙ্গে ওর বাচ্চাটা ছিলো। একটা স্ট্রলারে বসে আমার দিকে খুব ঔৎসুক্য নিয়ে তাকাচ্ছিলো বারবারসোমার এইটুকুন ছেলেটা। আমি ওর নাক টিপে আদর করে বলেছিলামওরে পিচ্চি তোকে আমি দেখেছি এক বছর আগেতুই তখন তোর মায়ের পেটে ছিলিরে! সোমা খুব হাসছিলো তখন। নিউইয়র্ক থেকে সস্ত্রীক এসেছিলো তাজুল ইমাম। তাজুল ইমামের গান সবাইকে মাতিয়ে দিয়েছিলো বললে কম বলা হবে। বলা উচিৎ--তাজুলের গান নাচিয়ে দিয়েছিলো রীতিমতো। তাজুল ইমাম সদানন্দ। সত্যিকারের বহুমুখী প্রতিভা। গাইতে পারেআঁকতে পারেলিখতে পারে আর পারে অবিরাম কৌতুক করতে। তাজুলের উপস্থিতি আড্ডায় প্রাণের সঞ্চার করে।

বিটিভির এককালের প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেত্রী আমাদের বন্ধু শান্তা ইসলামের সঙ্গে দেখা হলো দীর্ঘকাল পর, এই আড্ডার সুবাদে। শান্তা এসেছিলো টরন্টো থেকে ওর পুত্র সৌমিককে নিয়ে। সৌমিককে আমি দেখেছিলাম যখন সে এই এতোটুকুন ছিলো। এখন টরন্টো ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। সময় কতো দ্রুত বয়ে চলে! আমরা বুড়ো হয়ে যাচ্ছি! আমার কেন্দ্রীয় ছোটভাই (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সুবাদে)এবং আমার পত্রিকা 'ছোটদের কাগজ'এর 'মৃদু ভালোলাগা মৃদু মন্দলাগা' লেখক মৃদুল আহমেদ এসেছিলো নিউইয়র্ক থেকে। প্রচন্ড আড্ডাবাজ আর তুমুল মেধাবী ছেলেটা। গান গায় ছবি আঁকে গল্প-ছড়া লেখে আরো কতো কী যে করে! শনিবার রাতে শান্তার সঙ্গে 'যুদ্ধ এবং যুদ্ধ' নাটকের পাঠাভিনয়েও অংশ নিলো।

শনিবার বিকেল তিনটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ম্যারাথন সাহিত্য সভা চলছিলো। আমি সেখানে অল্প কিছুক্ষণ থেকেছি। সাহিত্যপাঠের আনুষ্ঠানিকতা আমাকে টানে না। রাকিবদের এই আড্ডায় গেলো বছর নাছোড় একজন সাহিত্যরসিক নন্দনতত্ত্ব বিষয়ে প্রায় ঘন্টাকালব্যাপি স্বরচিত প্রবন্ধ পাঠ করেছিলো! এই জীবনে জোর করে কেউ আমাকে নিজের লেখা কবিতা কিংবা গল্প-প্রবন্ধ শোনাতে পারেনি। তবে মন্ট্রিয়লে সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিলো এবারো। সাহিত্যের নামে মানুষকে বিরক্ত করার অধিকার কে কাকে দিয়েছে? আমি তাই কিছুক্ষণ অবস্থানের পর সটকে পড়েছি। তবে এই কিছুক্ষণের মধ্যেই নাহার মনিকা আর তুষার গায়েনের কবিতা এবং মুফতি ফারুকের গল্প পাঠ শুনেছি অমনোযোগী শ্রোতা হয়ে। শুনেছি সকাল অনন্তের চমৎকার আবৃত্তি। বাংলা একাডেমীর বইমেলা, নিজের বই, প্রকাশক আর বইমেলার সময় পত্রিকায় বইয়ের বিজ্ঞাপন বিষয়ে কিছু ভ্রান্ত তথ্য দিচ্ছিলেন সালমা বানী। খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে বিষয়গুলো জানি বলেই আমি তার কিছু কিছু খন্ডন করার চেষ্টা করেছি। বিশাল প্রবন্ধ আর দীর্ঘ গল্পপাঠ শোনার চাইতে লেখকদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বরং আমি বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করি। পাঠ আমি আমার মতোন করে করি। আমি পাঠ করি আমার রুচি ইচ্ছে আর প্রয়োজন অনুসারে। পাঠের ক্ষেত্রে বা শ্রুতির ক্ষেত্রে জবরদস্তি আমার অপছন্দ। আড্ডা তারচে বহু আকাঙ্খিত ও প্রার্থিত। অপরাহ্ন সুসমিতো, ইকবাল কবীর এবং ইফতেখার হোসেনের সঙ্গে এক সন্ধ্যায় বিস্তর গল্প করেছি রাকিবের স্টুডিও উঠান-লাগোয়া পার্কিং লটে হাঁটতে হাঁটতে। আমি সিগারেট টানি না কিন্তু ওরা তিনজন টানতে টানতে কাহিল না হওয়া পর্যন্ত থামে না! সিলেটের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখক তাজুল মোহাম্মদের সঙ্গে আড্ডা দিতেও আমার ভালো লাগে। এই লোকটার সারল্য আর সিলটি এক্সেন্টে শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণসমৃদ্ধ কথোপকথন আমার ভীষণ প্রিয়।

মন্ট্রিয়লের তরুণ কবি মাশরাফ মাহমুদ আমাকে ওর একটা কবিতার বই উপহার দিয়েছে। বইটা এখনো পড়া হয়নি। এবারের মন্ট্রিয়ল যাত্রা এবং অটোয়া ফেরার সময় আমার সঙ্গী ছিলো মেসবা আলম অর্ঘ্য নামের এক তরুণ কবি। ছটফটে হাসিখুশি স্বভাবের অর্ঘ্য গদ্য কিংবা কবিতায় নতুন ভাষাভঙ্গি প্রয়োগের ব্যাপারে দেখলাম খুবই আগ্রহী এবং কনফিডেন্ট।

এবার খুব মিস করেছি ইকবাল হাসান আর সুমন রহমানকে। ২০০৯ সালের প্রথম আড্ডায় আমরা খুব মজা করেছিলাম। গত আড্ডায় সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালও ছিলেন। ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী তপন চৌধুরী। এবার ওদের দেখলাম না। টরন্টো থেকে দেলওয়ার এলাহী এসেছিলো। দেলওয়ারকে আমি খুব পছন্দ করি তাঁর বিস্ময়কর সারল্যের কারণে। এক গাঢ়ঘনঅন্ধকারমোড়া মধ্যরাতে পার্ক ঘেঁষা প্রেইরি নদীর তীরে বসে দেলওয়ারের সঙ্গে পুরনো আধুনিক বাংলা গান নিয়ে কতো যে গালগল্প হলো! মুখে মুখে প্রিল্যুড ইন্টারল্যুড মিউজিকসহ তা দ্বৈত কণ্ঠে গীতও হলো। আমাদের একমাত্র সঙ্গী বা শ্রোতা ছিলো তুষার গায়েন। এক পর্যায়ে একদঙ্গল মশা আমাদের সমবেত সঙ্গীত শোনাতে এতোটাই ব্যাকুলতা প্রকাশ করতে থাকলো যে আমরা রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হলাম। দেলওয়ার বারবার থান্ডার বে তে থাকা ইকবাল হাসানকে স্মরণ করছিলো। এটা ঠিক যে ইকবাল এলে আমিও আরো বেশি আনন্দ পেতাম। আড্ডার সঙ্গী হিশেবে ইকবাল হাসান সত্যিই চমৎকার।

নিউইয়র্কের মুস্তাফা আরসাদ তারু একজন চারু ও কারুশিল্পী। এসেছিলেন সপরিবারে। আমাকে জীবনানন্দ দাশের কবিতার পঙ্‌ক্তি উৎকীর্ণ একটা নেমপ্লেট ধরণের বস্তু উপহার দিয়েছেন। অটোয়া এসে দেখি তাতে বেশ ক'টা বানান ভুল। ওখানে মুদ্রিত তিনটে চন্দ্রবিন্দুর দুটো চন্দ্রবিন্দুই বিন্দুহীন! (ভাই তারু/পিয়ো মাত ইত্‌না দারু। হাহ হাহ হাহা।) গানপ্রিয় তারুও ভীষণ আড্ডাবাজ ও হাসিখুশি মানুষ। এই তারুর প্ররোচনা ও কুবুদ্ধিতে আমাদের কয়েকজনকে বৃক্ষ হিশেবে প্রদর্শন করেছে তাজুল ইমাম। কিংবা বলা যায় পাঁচটি বৃক্ষকে আমাদের নামে নামকরণ করেছিলো তাজুল। যেমন রাকিব বৃক্ষ, মনিকা বৃক্ষ, জ্যোতি বৃক্ষ, পূরবী বৃক্ষ এবং রিটন বৃক্ষ। নামকরণকৃত সবক'টা বৃক্ষই লম্বা উঁচু দীর্ঘ। কিন্তু 'রিটন বৃক্ষ'টা খাটো বেঁটে ছোট। কী অবিচার!! প্রকৃতি আমাকে লম্বাকৃতি হতে বাধ সেধেছিলো। তাতে আমার কোনো হাত ছিলো না। আমি যে যথেষ্ঠ লম্বা নই সেটা অনেক কষ্টে ভুলতে পেরেছিলাম। কিন্তু তাজুল-তারুদের যৌথ দুশমনি আমার সেই বেদনার স্মৃতিকে পুনজাগরুক করেছে! অবশেষে ভগ্ন হৃদয়ে আমি আবিস্কার করেছি নামকরণকৃত আকারে অহেতুক লম্বা বৃক্ষগুলো সীমিত পত্রপল্লবে ছাওয়া, বাকল খসে যাওয়া! তুলনায় ছোট বৃক্ষটি সবুজপত্রপল্লবে ঠাঁসা, সজীব সতেজ আর প্রাণবন্ত, এককথায় খাসা! এর বাকলও বিপুল তারুণ্যপ্লাবিত এবং অপেক্ষাকৃত মসৃণ! আমার মনখারাপের ব্যাপারটা উপলব্ধি করে পার্কের পাতাগন্ধী উদাসী বাতাস আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলেছিলো--'ফলবান বৃক্ষেরা লম্বা নয়। কিন্তু তারা সুঠাম। ফলভারে নত এবং ঋজু।' আমি নতুন করে উপলব্ধি করেছিলাম মন্ট্রিয়লের মানুষগুলোর মতো এর সবুজ প্রকৃতি আর বাতাসও দারূণ বন্ধুবৎসল! সেই কারণেই মন্ট্রিয়লকে আমার এতো ভালো লাগে!
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪

========
তুষারের মনবাকসোনিয়ে অঞ্জনের ছবি  
             
ভারতের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী, অভিনেতা ও নির্মাতা অঞ্জন দত্ত প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ছবিতে কাজ করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সাংবাদিক, কথা সাহিত্যিক, সময় টেলিভিশনের পরিচালক তুষার আবদুল্লাহর চিত্রনাট্য মনবাকসোচলচ্চিত্রের পরিচালনার পাশাপাশি অঞ্জন দত্ত এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করবেন। মনবাকসোতে অঞ্জন দত্তের মেয়ে মৈত্রীর চরিত্রে অভিনয় করবেন বিদ্যা সিনহা মিম। বাবা-মেয়ের সম্পর্কের টানাপড়েন নির্ভর এই চলচ্চিত্রের লোকেশন দেখতে সিলেট, মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল এসেছিলেন অঞ্জন দত্ত ও তুষার আবদুল্লাহসহ মনবাকসোর টিম।


==============
অরণ্যে উঠান আবারও জমজমাট
অপরাহ্ণ সুসমিতো

রাকীব হাসান ও আমাদের উঠান:
চিত্রশিল্পী রাকীব হাসান ২০০০ সাল থেকে মন্ট্রিয়লে, তার আগে ১৯৯০-এর শুরু থেকে নাইরোবি, কেনিয়ায়। তারও আগে আমাদের বিদর্ভ নগরী ঢাকাতে সংবাদপত্রে। ঢাকাতে লেখালেখি, সাংবাদিকতা, ছবি আঁকা সব চলছিল। তারপর আচানক বাক্স পেটরা গুছিয়ে আফ্রিকার সৌন্দর্য স্নাত কেনিয়ায় উড়ে এলেন। ছবি নিয়ে পড়াশুনা, একক ও দলগত চিত্র প্রদর্শণী করেন ওখানে। এভাবে লন্ডন, প্যারিসঢাকা, মুম্বাইসহ আরো শহরে।
২০০০ সাল থেকে রাকীব হাসান এবং কবি ও কথা সাহিত্যিক নাহার মনিকা মন্ট্রিয়লে তাঁবু গেঁড়ে আছেন। সেই থেকে আমাদের অমল বন্ধুতা। ওদের সংসারে এক সাথে চিত্রণ ও চারণ এলো। ওরাও আমাদের মাঝে রোদ্দুর বৃষ্টি হয়ে ঠাঁই করে নিলো।
রাকীবের ছবি আঁকার জগত তাঁর দৈনন্দিন প্রথা থেকে আলাদা। যখন ভিল সাঁ-লরা থাকতেনতখন তার ছবি আঁকার জায়গা ছিল নিজের বাসা থেকে আলাদা। আবার যখন সে জায়গাটা ছাড়লেন তখনই আরেকটি জায়গায় যেখানে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তার নিচেই শুরু করলেন নুতনত্বে, আলাদা আঙ্গিকে মনের মতো নিজস্ব গ্যালারী উঠান’, সেটা ২০০৯ সাল। অবশ্য তার আগেই ২০০৪ এ মন্ট্রিয়লে রাকীবের ২০তম একক চিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেছে।
২০০৭ সালে মিস্টিক মেটাফোরনামে সিরিজ চিত্র প্রদর্শনী হলো অলিয়ঁস ফ্রসেজ, নাইরোবি আর জেহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারী, মুম্বাইতে। ব্যাপক সুনাম কুড়ালো এই প্রদর্শনী দুটো। ১৯৯৫ সালে বোহেমিয়ানস ব্লিসনামে তাঁর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী হয় নাইরোবীতে। তখনই নজর কাড়েন চিত্র বোদ্ধাদের।

২০০৯ সালে উঠান আর্ট গ্যালারী উদ্বোধন উপলক্ষে মন্ট্রিয়লে এক আশ্চর্য সুন্দর ঘটনা ঘটে। উদ্বোধন উপলক্ষে মন্ট্রিয়লে ৩ দিন ব্যাপী কবি শিল্পী সাহিত্যিকদের মিলন মেলা বসে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে উদ্বোধন করেছিলেন রাকীবের সঙ্গী কবি ও গল্পকার নাহার মনিকা। অতিথি হয়ে এসেছিলেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, পূরবী বসু, ছড়াকার ও গদ্যকার লুৎফর রহমান রিটন। এসেছিলেন অসাধারণ বহুমুখী মানুষ শিল্পী তাজুল ইমাম।
 
পূরবী বসু ফিরে গিয়ে এক দুর্দান্ত লেখা লিখলেন এই মিলনমেলা নিয়ে- উঠান থেকে অরণ্যে। ফরাসী সুরভিত শহরের এই রোদেলা সুন্দর মেলা সাড়া জাগালো উত্তর আমেরিকায়। তখন সবাই ঠিক করলাম অরণ্য যাপন আমাদের বছরে একবার করতেই হবে। সেই থেকে শুরু।
উঠানে আছি আবার অরণ্যে যাবার জন্য প্রতি বছর জুন জুলাই আগস্টের অপেক্ষা করি। রাত বাড়লে বোয়া-দ্য-লিয়েজ অরণ্য বিহারে সবুজ সুর নামে। প্রাণ আছে সবুজ হয়ে থাকা মানুষগুলোন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছে,কবিতা পড়ছে, গদ্য হচ্ছে, গান হচ্ছে, ছোট্ট বন্ধুরা নদীর ধার ধরে দৌঁড় দেবে.. এই তো আমাদের আবার অরণ্যে।

সেদিন ছিল শুক্রবার সন্ধ্যা:
৫ম বছরে পা দিলাম আমরা এবারে গত ২২, ২৩ ও ২৪ আগস্ট, ২০১৪-তে। উপলক্ষ্য আবারও শিল্পী রাকীব হাসানের সাম্প্রতিক চিত্রকর্ম, ওর ৫০ বছরে প্রবেশ করা। 
নাহার মনিকা সব দায়িত্ব তুলে নিলেন। শুক্রবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় উঠান আর্ট গ্যালারীর মোহন আলোতে চিত্রকর্মের একক প্রদর্শনী শুরু হলো। রাকীবকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল এই প্রদর্শনী নিয়ে খুব কাজ করেছে, খেটেছে, ছবি এঁকেছে।

গ্যালারীর গাছের গুড়িতে বসে থাকা সম্প্রতি বাংলা একাডেমী পুরস্কৃত পূরবী বসু, পাশে ঝকঝকে সজীব প্রিয় জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, ডেনভার থেকে উড়ে এসেছেন। আছেন চমৎকার ফতুয়া পরে কবি, প্রাবন্ধিক তুষার গায়েন। টরন্টো থেকে এই প্রথম মন্ট্রিয়লে। জানালেন দিনভর শহর ঘুরে এসে ক্লান্ত থাকলেও এখন চনমনে। আবৃত্তিকার সকাল অনন্তের সাথে এই প্রথম আলাপ হলো তুষারের। গল্পকার মুফতি ফারুক তার ছেলে আলভীকে নিয়ে। আমাদের সবার প্রিয় প্রাণোচ্ছল লুৎফর রহমান রিটন গ্যালারীর বাইরে আয়েশ করে হাঁটছেন। সাথে অনেকদিন পর দেখা ইফতি ভাই।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক তাজুল মোহাম্মদ ভাই এসে ফোন করে করে টরন্টো থেকে আসা কবি দেলওয়ার এলাহীকে উঠানের পথ নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। তাজুল মোহাম্মদ ভাইয়ের দিক নির্দেশনা জ্ঞান খুব ভালো। এর কিছুক্ষণ পরেই হুড়মুড় করে এক ঝাঁক প্রিয় গুণীমুখ  এসে গ্যালারীর দোর গোড়ায় হাজির। টরন্টো থেকে কথা সাহিত্যিক সালমা বানী, সাথে নজরুল সঙ্গীতের আলো করা শিল্পী ফেরদৌস আরা। সেই কবে মন্ট্রিয়লে নজরুল সম্মেলনে এসেছিলেন ফেরদৌস আরা। এখনো আগের মতো উজ্জ্বল। এসেছেন টরন্টো থেকে গানের কন্ঠ নমিতা দত্ত (কিন্তু এখন গান গাইতে অনুরোধ করলে না না করেন হাসিমুখে ), নমিতার সাথে প্রতিভাময়ী নাট্যজন, অভিনেত্রী শান্তা ইসলাম। যুদ্ধ এবং যুদ্ধএর অসামান্য মঞ্চকর্মী জিনাত মহল রূপী শান্তা ইসলাম। সাথে ছেলে সৌমিক।

এরা সবাই প্রথমবারের মতো। প্রথমবারের মতো এসেছেন অটোয়া থেকে প্রবল-তরুণ, কবি মেসবাহ আলম অর্ঘ্য। অনেকগুলো বই সাথে নিয়ে কবি আশরাফ অভি। কী সুন্দর করে গ্যালারীর দরোজায় সবাইকে বরণ করছিল চিত্রণ, চারণ ও আলভি।
সবাই দলবেঁধে আমাদের অরণ্যে, সেই স্মৃতি ধরে রাখা কটেজে। বাইরের খোলা আকাশে বেঞ্চে। সাংবাদিক ইকবাল কবীরের ফ্লাশ জ্বলছিল রাতের খানখান অন্ধকার ভেঙ্গে। সকালের বানানো গরম গরম সব্জী-বড়া মূহুর্তেই শেষ। আড্ডা কি শেষ হয়?
হৈচৈ করে তখনই একটা গাড়ি ঢুকে পড়ে আমাদের সবুজ সীমানায়। নাম্বার প্লেটে নিউইয়র্ক লেখা দেখে সবাই হৈ হৈ করে ওঠে। নিউইয়র্ক থেকে এসেছেন আমাদের প্রাণ-বাউল, বহুধা গুণের মানুষ তাজুল ইমাম; তাজুল ভাইয়ের সঙ্গিনী স্বপ্না আপা, সদা অ্যাক্টিভ, বিনয়ী হাসিমুখ ফটোগ্রাফার মোস্তফা আরশাদ তারু ভাই, সাথে মিষ্টি মুখ মনা আপা।
একটা বিশাল ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে অনেকদিন পর, দ্বিতীয় বারের মতো গল্পকার, ছড়াকার মৃদুল আহমেদ। মৃদুল সদ্য বাবা হয়েছেন। শুরু হলো অরণ্য বিহার, সম্মিলনী।

শনিবারে অরণ্যের একদিন প্রতিদিন:
যথারীতি ঘুম ভাঙ্গলো দেরী করে। কটেজের কার্ণিশে ঝলমলে রোদ। কেউ বেরিয়ে পড়লো নদীর ধারে, কেউ অরণ্যে, কেউ নাস্তা খাবে বলে চা বসালো বড় কেটলিতে। এরই মধ্যে দিনভর কর্মসূচী টাঙ্গিয়ে দেয়া হলো। এবার কটেজে ওয়াই-ফাই কানেকশন আছে। কেউ মন্ট্রিয়লের বেগেলে ক্রিম চিজ লাগাতে লাগাতে ল্যাপটপ খুললেন। মনা আপা, মনিকা, তারু ভাই দুপুরের খাবারের জন্য লেগে গেলেন। তাজুল মোহাম্মদ ভাই সকাল সকাল তাজুল ইমাম ভাই ও দেলওয়ার এলাহীকে নিয়ে কিছুদিন আগে ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করা শিল্পী শান্তনু দের শোকসভায় গেলেন।

দেরী করে নাস্তা হলো বলে দুপুরের খাবারে গরজ পড়েনি। দুপুরের রোদ চড়ুই পাখিগুলোর সাথে খানিকটা আড়াল হলে আমাদের সাহিত্য আসর শুরু হলো। অনুষ্ঠান সঞ্চালক নাহার মনিকা আনন্দের সাথে জানালেন যে আজকের সাহিত্য আড্ডাটা বেশ অন্যরকম। তিন তিন জন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত আমাদের মাঝে আসীন। শুরু হলো আয়েশী সাহিত্য আড্ডা। কবিতা পড়লেন তুষার গায়েন, সকাল অনন্ত, নাহার মনিকা, দেলওয়ার এলাহী, রাকীব হাসান, মেসবাহ আলম অর্ঘ্য, আশরাফ অভি ও আমি।
অর্ঘ্যের কবিতায় ইংরেজী শব্দের দুই একটা ব্যবহারের প্রশ্নে আলোচনার সূত্র ঘটালেন কবি তুষার গায়েন। পক্ষে বিপক্ষে তুমুল কথা চললো। গল্প পড়লেন মুফতি ফারুক ও মৃদুল আহমেদ। চমৎকার বুনন। অসাধারন ঢঙ্গে, ছন্দে তাজুল ইমাম ছড়া, প্যারোডি শোনালেন। ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন প্রকাশক-লেখক সম্পর্ক নিয়ে নানা কথা বললেন, বুদ্ধিদীপ্ত সরসে।

সালমা বানী সম্প্রতি প্রকাশিত তার বিশাল উপন্যাস ইমিগ্রেশনএর নেপথ্য কাজ, শ্রম, প্রতিকূল পরিবেশ, মার্কেটিং বিষয়ে অনেক খোলামেলা আলোচনা করলেন। আশরাফ অভি বিজ্ঞান বিষয়ক তার করা একটি অনুবাদ গ্রন্থ নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু পড়লেন কবিত ।
একদম টাটকা এক গল্প নিয়ে বসে আছেন নন্দিত কথা সাহিত্যিক পূরবীদি। সম্ভব অসম্ভবের পারাপার’ ( নমটা ভুল হতে পারে স্মরণ জনিত কারণে)। দীর্ঘ গল্প। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ শুনলাম। তুষার আলোচনা করলেন ,জ্যোতিদা কথা বললেন গল্প নিয়ে। জমে উঠলো আরো।
সবশেষে ষাটের দশকে সাহিত্য পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে নিজের লেখা এক জ্ঞান গর্ভ প্রবন্ধ পড়লেন সবার প্রিয় জ্যোতি প্রকাশ দত্ত। সেই সময়কার ঢাকা কেন্দ্রিক লিটল ম্যাগ, ঢাকার বাইরে প্রকাশিত অন্য সব সাহিত্য পত্রিকা নিয়ে বিশদ তথ্য-বিশ্লেষিত লেখা।
ইফতি ভাইয়ের তৈরী গরম পাকোড়া আর ধুমায়িত চা দিয়ে শেষ হলো এবারের সাহিত্য আড্ডা। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি; এর মধ্যে ৫ ঘন্টা কোথা থেকে উধাও।

সেই গান ছড়িয়ে গেল সবখানে:
শব্দ যন্ত্র আর  তবলা নিয়ে মন্ট্রিয়লের সুপরিচিত শংকর রায় চৌধুরী ও বৌদী উপস্থিত। ঘরোয়া সাজগোজ, স্টেজ বানিয়ে ফেললো অর্ঘ্য, অভি, শংকরদা, বৌদী। মৃদুল বাইরের খোলা আকাশে বসে নোটবুকে গান লিখছে, ইকবাল ছবি তুলছে। মন্ট্রিয়ল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে অটোয়া থেকে এসেছিলেন চলচ্চিত্র ও ডকু-ফিল্ম নির্মাতা সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল, ওর বউ কাজী মীরা, ওদের দুটো মেয়ে গল্প আর গ্রন্থ। ওরাও যোগ দিল।
একে একে সবাই প্রস্তুত। চিত্রণ ও চারণের গান দিয়ে শুরু হলো রাতের সঙ্গীতের অবিরাম আসর। ওদের গান শেখাচ্ছেন আরেক গুণীজন, সঙ্গীত শিল্পী ড: মমতা মমতাজ। পর পর গান করলেন দেবপ্রিয়া কর রুমা, অনুজা দত্ত বুবলী। রুমা খুব ভালো করেন। ওর গান গাইবার সময় গভীর মন দিয়ে শুনছিলেন ওর বর আরেকজন সঙ্গীতের মানুষ মৃণাল পিংকু সাথে আমরাও।
অনুজা দত্ত বুবলী জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলায় পড়াশুনা করেছেন। অনুপম সুন্দর গান করেন। ওর বর উদ্দীপ দ্ত্ত জানালেন যে- এবারে ছোট ছেলেটাকে সাথে আনেনি, তাই মন দিয়ে গান শুনতে পারছে।

সোমা চৌধুরী সবসময়ই নিবেদিত প্রাণ দরদী শিল্পী,রবীন্দ্রনাথের গান করেন সুরের রুমরুম ছড়িয়ে। সম্প্রতি ওর গানের একটি সিডি চলে এসো পরবাসীবেরিয়েছে রবীন্দ্র সঙ্গীতের। কী যে সুন্দর মায়া বিছিয়ে গান করেন সোমা!
তাজুল ইমাম ভাইয়ের গল্প আগেই করেছি। এই সদা উচ্ছ্বল বেগবান মানুষ মাইক্রোফোনের সামনে এলেই দর্শককূল জেগে ওঠেন দেশজ সুরে,সেই দোল বাউলিয়ানায়। সবাইকে মাতিয়ে অনেকগুলো গান করলেন তাজুল ইমাম।
যুদ্ধ এবং যুদ্ধ নাটকের অবিস্মরণীয় অংশ পাঠ করে শোনালেন শান্তা ইসলাম, সাথে পাঠাভিনয় করলেন মৃদুল আহমেদ। মূহুর্তে সবাই নস্টালজিক হয়ে পড়লো। মনে পড়ছিল মঞ্চ নাটক করবার সেই অমল ধবল দিনগুলোর কথা।

সবশেষে আলো করে এলেন, দাঁড়ালেন মাইক্রোফোনের সামনে আমাদের অন্যতম আকর্ষণ নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস আরা। রাত বাড়ছিল টকটক করে। সেই অরণ্যে যেন ফেরদৌস আরার সুর, কন্ঠ মণিমায়া ছড়ালো সবখানে। সবার অনুরোধে আরো গাইলেন।

থামতেই হয় এক সময়। যখন থামলো সুরের আলো, রাত নিজেই ক্লান্ত। শনিবারের শেষ রাতে দেশজ খাবারে মৌ মৌ করে উঠলো খাবার ঘর। সাথে গল্প সাথে হাসি সাথে আচার, শুঁটকি।





তরী আমাদের হঠাৎ ভেসে যায়:
রোববার সকালের ঝলমলে রোদেও যেন বিষণ্ণতা। রোববার এলেই বিষণ্ণ সুন্দর বিদায়ের ঘন্টা বাজতে থাকে থেকে থেকে। শুরু হয় দূরপাল্লার যাত্রীর ব্যাগ কিট গোছানো। দূয়ারে দাঁড়ায়ে গাড়ি। যেতে শুরু করেন ফেরদৌস আরা, সালমা বানী, শান্তা ইসলাম, নমিতা।
নদীর ধারে সবাই দলবেঁধে হেঁটে যাই সবাই। মাথার উপর ভারী কটকট রোদের আলোয়ান। ঢেউয়ের সাথে সাথে বিরহ নামে উঠান থেকে অরণ্যে। ছবি তোলা হয় চারপাশের বন ছুঁয়ে ছুঁয়ে। বেলা চারটায় যখন কটেজটায় তালা মেরে দেই আমরা ততক্ষণে চলে গেছেন তাজুল ইমাম, স্বপ্না আপা, মোস্তফা আরশাদ ভাই, মনা আপা ও মৃদুল। পিছাপিছি দেলওয়ার এলাহী, ওর বউ শিউলী, ছেলে মেয়ে দুটো ওদের। সাথে নিয়ে গেছে কবি তুষার গায়েনকেও।
রোদ টুপটাপ লুকালো রাকীবের বাড়ির ব্যালকনীতে। চা করছে মনিকা। সকাল গল্প করছে পূরবীদি, জ্যোতিদার সাথে। রিটন আর অর্ঘ্য হাল্কা ঘুমিয়ে নিলো তরাসে,সন্ধ্যায় সাইফুল ওয়াদুদ হেলালের ডকুমেন্টারী বাংলাদেশের হৃদয়দেখবো বলে। সন্ধ্যা সাত দশে আমরা যখন থিয়েটার হলে যখন পৌঁছাই তখন হেলাল মঞ্চে দাঁড়িয়ে ওর ছবি নিয়ে কথা বলছেন দর্শকদের উদ্দেশে। ৩৫ মিনিটের ছবি। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবী আর এই মঞ্চের পাদপ্রদীপ ঘিরে থাকা এক শিশু যার নাম হৃদয় ..এই নিয়েই স্পর্শ করা ছবি।
ডাউনটাউনে নিয়ন আলো ভেসে থাকে ফরাসী সুরভি মাখায়ে। সব পাখি ঘরে ফেরে, আমাদেরও ফিরতে হয়।
রাতের আলো সরায়ে ৩ দিনের রেণু মাখিয়ে ঘরে ফিরি। ঘরে ফিরি..

===============
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের বার্ষিক উৎসব

কানাডায় সামার শেষ। চলছে চমৎকার আবহাওয়া। মন মাতানো প্রাকৃতিক পরিবেশে টরন্টোতে চলছে বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি প্রায় প্রতি ছুটির দিনে জমে উঠছে জমজমাট বন ভোজন।  প্রতিবারের মতো এবারও আগামী ১ সেপ্টেম্বর সোমবার টরন্টোতে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের বার্ষিক পিকনিক অনুষ্ঠিত হবে, ১০০৫ ব্রিমলি রোডের থমসন পার্কে। তাই চলছে নানান আয়োজন।



======
কানাডায় নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রাক্ষুসী

এবার কানাডায় নির্মিত হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রাক্ষুসী। দেশী টেলিভিশন নিবেদিত এবং সুপ্রিয়তি ইনভেশনস প্রযোজিত রাক্ষুসীকানাডার নয়নভিরাম লোকেশনে নির্মিত ছবিটি প্রদর্শিত হবে আরটিভিতে ৩০ আগস্ট।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রাক্ষুসীগল্প অবলম্বনে ছবিটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন ইলোরা আমীন, চিত্রধারণ করেছেন ডঃ খান মঞ্জুর-এ-খোদা, সম্পাদনায় সুপ্রিয় সৌরভ এবং এতে অভিনয় করেছেন কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী অভিনেতারা।
তথ্য সূত্রঃ শেখর গোমেজ



মন্ট্রিয়লে আবারো তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক আড্ডা

মন্ট্রিয়লে আবারো শুরু হতে যাচ্ছে- তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক আড্ডা। আগামী ২২, ২৩ এবং ২৪ আগষ্ট শুত্র, শনি, রোববার রাকীব-মনিকার সৌজন্যে পঞ্চম বারের মত এই আড্ডায় যোগ দিবে উত্তর আমেরিকার লেখক-শিল্পী-সাংস্কৃতিককর্মীতা।
গত বছর ২০১৩’তে টানা তিন দিনব্যাপী চলে ম্যারাথন সাংস্কৃতিক আড্ডা আর প্রায় সারা রাতব্যাপী গানের আসর। রবীন্দ্র সজ্ঞীত নজরুল গীতি, লোক সজ্ঞীত, হারানো-পুরানো দিনের গান, আধুনিক সজ্ঞীত, দেশাত্বকবোধক গান পরিবেশন করেন- সোমা চৌধুরী, তাজুল ইসলাম, মমতা মমতাজ, মইনুল আহসান, অনুজা দত্ত, নবীউল হক বাবলু, আশরাফ ইসলাম প্রমুখ। 
গত বার প্রেইরী নদীর পাড়ে ঘন অরণ্যের আলো-ছায়া-রোদ-বৃষ্টির ভেতর বোয়া দ্য লিয়েজ কটেজে এই সাংস্কৃতিক উৎসবে সঙ্গীতানুষ্ঠানের পাশাপাশি চলে গল্প-কবিতা-ছড়া পাঠের আসর। সেই সাথে নির্মল জমজমাট আড্ডা। সেই সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নেন দুই বাংলা ছাড়াও নিউ ইর্য়ক, মন্ট্রিয়ল, টরন্টো, অটোয়া থেকে প্রচুর কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, সাংস্কৃতিককর্মি অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, লুৎফর রহমান রিটন, পূরবী বসু, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, তপন চৌধুরী, রাকীব হাসান, নাহার মনিকা, সাদ কামালী, শেখর-ই- গোমেজ, অপরাহ্ন সুস্মিতা এবং আরও অনেকেই।

============
দুই বন্ধুর বৃষ্টিভেজা যৌথ বিদায়
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

জীবনের সীমানা ছাড়িয়ে, মরণের সেঁতু পেরিয়ে আমার আরো দুই বন্ধু তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীর  যেনো হাত ধরাধরি করে চলে গেনেন!  তাঁদের মৃত্যুতে আমি মানসিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছি। বন্ধু হারানোর বেদনায় বিস্ময়ে কদিন ধরে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! কিছু একটা লিখতে চেয়েছি; পারছিনা। যেন ভাষা হারিয়ে গেছে। কী লিখবো? কোথা থেকে শুরু করবো? ‘শেষতো হয়েই গেছে! হয়ে গেছে আমাদের সর্বনাশ!!
আমি হারালাম আমার দুই প্রিয় বন্ধুকে। আর দেশ ও জাতি হারালো দুই প্রতিভাবান কৃতি সন্তান! তাঁদের এই অপরিসীম ক্ষতির কথা ভাবতেই আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। তাই, তাৎক্ষ
ণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকার একটি অনলাইন পত্রিকায় বলেছিলামঃ
আমার বাবার মৃত্যু সংবাদ পেলেও আমি এতটা আহত হতাম না। কারণ পরিণতি বয়সে মৃত্যু স্বাভাবিক। যাদের কাছ থেকে দেশ অনেক কিছু পেত, মানুষের অনেক উপকার হতো, তাদের এই অপরিণত বয়েসে দুর্ঘটনায় মৃত্যু কখনোই আমাদের কাম্য হতে পারে না। (দ্রঃ ঢাকা, ১৩ আগস্ট, রেডটাইমস বিডি ডটকম)

২. তা
রা কোনো ভাবেই প্রবাসীহতে পারেন নি
উত্তর আমেরিকা ফেরত তারেক-মিশুক কোনো ভাবেই প্রবাসীহতে পারেন নি। তাঁরা মনে প্রাণে বাঙালি ছিলেন। তাই নাড়ির প্রবল টানে নিখাঁদ দেশপ্রেমেই ফিরে গিয়েছিলেন স্বদেশে। স্বদেশের শিল্প সংস্কৃতিকে দুজনেই কি যে গভীর ভাবে ভালোবেসে বুকে ভেতর যত্ন করে লালন করতেন; তাঁর দৃষ্টান্ত-তাঁদের কাজ। তাঁদের কমিটম্যান্ট! বাঙালি জাতির ঐতিহ্য-ইতিহাস, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলার মানুয ছিলো তাঁদের মূলমন্ত্র। মিডিয়ার মাধ্যমে তারা তা তুলে ধরেছেন নিরলস ও নিঃস্বার্থ ভাবে। দুজনের চিত্রচিত্ত কি যে একবার ছিলো, তা তাঁদের ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব আর যৌথ কর্মেই উজ্জ্বল উদাহরণ।
তারেক কত বড় মাপের চিত্র নির্মাতা ছিলেন কিংবা মিশুক কত বড় মাপের চিত্রগ্রাহক ছিলেন; তা তাঁদের মৃত্যুর পর দেশবাসী এবং প্রবাসীরা অনুধাবন করতে পেরেছেন। আমি বলবো ভিন্ন কথা। আমি বলবো- মিশুক আর মাসুদ কতবড় মাপের মানুষ ছিলেন! ব্যক্তিজীবনে তাঁদের আদর্শ, সততা, শিক্ষা, দূরদর্শীতা, অমায়িক ব্যবহার, নিষ্ঠা, নিরহঙ্কার, নম্রতা, ভদ্রতা, রুচিশীলতা, ধৈর্যশালতা, অর্থাৎ একজন আদর্শবাদী মানুষের জীবনে যা-যা প্রযোজন; অভিধানে যে সব গুণাবলির শব্দার্থ আছে, তা যেন মিশুক-তারেকের ক্ষেত্রে প্রায় পুরোটাই প্রযোজ্য! যা বর্তমান সময়ে ও সমাজে খুবই দুর্লভ! কারণ, এখন বেয়াদবেভরে গেছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগৎ। সেখানে তাঁরা প্রতীকী পদ্মফুল হয়ে ভেসেছিলেন।

৩. পূর্ণদৈর্ঘ্য স্মৃতি কী এই স্বল্পদৈর্ঘ্য লেখায় প্রকাশ করা যায়?
বিটিভিতে দৃষ্টি ও সৃষ্টিঅনুষ্ঠানে মৃক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলাম তারেক আর ক্যাথরিনকে। অনুষ্ঠান ধারণের পর বেঁকে বসলেন তৎকালীন বিটিভির জিএম বরকতুল্লাহ। কারণ ক্যাথেরিন বিদেশিনী, তাই। একইভাবে আরেক সদ্য প্রয়াত খ্যাতিমান সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ড. মৃদুল কান্তির ধারণকৃত অনুষ্ঠান নিয়েও আপত্তি তুলে ছিলেন বরকতুল্লাহ সাহেব। আরেকবার কবি শামসুর রাহমানকে বিটিভিতে আনার জন্য গাড়ি রিক্যুজিশন দেয়া হলে, তা বাতিল করলেন বরকতুল্লাহ! অসুস্থ চিত্তরঞ্জন সাহার সাক্ষাৎকার ধারণ করার জন্য তাঁর বাসায় ক্যামারা নিতে মানা করে দেন! বরকতুল্লাহয় ভরে গেছে বাংলাদেশ! আজ এই দিন কৃতি পুরুষদের মৃত্যুর পর বার বার মনে পড়ছে বরকতুল্লাহদের কথা।
যা হোক। তারেকের সাথে পূর্ণদৈর্ঘ্য স্মৃতি কী এই স্বল্পদৈর্ঘ্য লেখায় প্রকাশ করা যায়? তাঁর বাসায়, আমার অফিসে কতো কথা, কত স্মৃতি! মাদ্রাসায় কায়দা-সিবারা পড়া সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা তারেক কিভাবে আমেরিকায় গেলেন, আমেরিকান ক্যাথরিন মাসুদকে জীবন সঙ্গীনী করলেন, সেখান থেকে তাঁরা জোগাড় করলের লিয়ার লেভিডের সেভেন্টি ওয়ান, ফিরে এলেন ঢাকায়, ফিরে শুরু করলেন চলচ্চিত্র নির্মাণ, চালু করলেন অডিওভিশন এক সমাপ্ত জীবনের সব কিছু ফেলে, এমন কি এক মাত্র সন্তা 'বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিশাদ'কেও ছেড়ে চলে গেলেন বন্ধু আমার।
সেই বিটিভির গেটে ২০০৯-এ শেষ দেখা তারেকের সাথে। হাত মেলাতে মেলাতে হাসিমাখা মুখে বললেন- আমরা বিদেশ থেকে চলে এলাম। আর আপনি বিদেশে গেলেন!বললাম- ফিরে আসবো।
হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো, আসার সম
কিছু নিয়ে আসবেন। বললাম- হ্যাঁ, ‘কানাডায় ১৯৭১নিয়ে আসবো।
আর ঢাকার বন্ধু মিশুককে পেয়ে গেলাম কানাডায়! শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর বড় ছেলে মিশুক  বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা, দেশে-বিদেশে সাংবাদিকতা, বিবিসির ভিডিও এবং চিত্র গ্রাহক, কানাডার রিয়েল টেলিভিশনের হেড অব ব্রডকাস্টের মতো কাজ করেও সৃজনশীল কাজের জন্য মনে মনে অস্থির ছিলেন।  তাঁ সাথে শেষ দেখা, টরন্টোর ড্যানফোর্থে। ওয়াশিংটন থেকে ফিরছেন। মিডল্যান্ড এভিনিউ আর ড্যানফোর্থ রোডস্থ বাসায় যাবার আগে বাংলা পাড়ায় এসেছেন- একজনে সাথে দেখা করতে। দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছেন। সিগারেট টানতে টানতে গুচ্ছ গোফের ফাঁকে সেই অপূর্ব হাসি ছড়ানো মুখে বললেন দেশে যাচ্ছি। এটিএন নিউজে জয়েন করবো। আমার ছাত্রী মুন্নি সাহার জন্যই যাওয়া।সেই যাওয়াই ছিলো তাঁর মাটির কাছে ফিরে যাওয়া, মাতৃভুমির কাছে যাওয়া!

আমার গবেষণাগ্রন্থ কানাডায় ১৯৭১নিয়ে কাজ করতে করতে প্রয়োজন পড়লো মিশুককে। কারণ, মিশুক কানাডায় ১৯৭১-এর যুদ্ধ শিশু নিয়ে কাজ করেছিলেন। তাই তাঁর ইমেইলে এড্রেসে তাঁর ফোন নম্বর চেয়ে যোগাযোগ করলাম। গত ডিসেম্বর ১২, ২০১০ তারিখে মিশুকের মেইল পেলাম। মিশুক লিখেছিলেনঃ 
Aami bhalo aachi Dulal Bhai. Aasha kori apnarao bhalo aachen. Aamar cell phone number holo: +8801842898989
Best,
Mishuk”

তারপর সেই নম্বরে তাঁর সাথে এ বিষয়ে কথা হলো। কিন্তু আর কখনোই মিশুককে ০১৮৪২৮৯৮৯৮৯ সেলফোনে পাওয়া যাবে না। আর কোনোদিনই- mishuk@therealnews.com থেকে আসবে না মিশুকের
স্পর্শ মাখানো মেইল।


. যেতে নাহি দিব  হায়, তবু যেতে দিতে হয়...
আগষ্ট মাস বেদনার মাস। এই কষ্টের মাসেই মহান মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুভাষ চন্দ্র বসু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুর রাহমান, আলতাফ মাহমুদ, বিমল কর, আবু জাফর শামসুদ্দীন, অরুণ মিত্র, আবদুল্লাহ আল-মামুন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, হুমায়ুন আজাদ, সন্তোষ গুপ্ত প্রমুখ এ তালিকায় আরো বড়। এদেঁর তালিকায় নাম লেখালেন তারেক মাসুদ, নাম লেখালেন মিশুক মুনীর।
এই আগষ্ট আর শ্রাবণ পাশাপাশি অবস্থান করে বলেই বাংলার কৃতি সন্তানদের মৃত্যুতে থাকে শ্রাবণের ধারা। তাই রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে বৃষ্টিভেজা শ্রাবণে মুক্তির গান গেয়ে মাটির ময়না তারেক মাসুদ অন্তর্যাত্রামাটির রে ঘুমিয়ে গেলেন আর তাঁর সাথী হলে মিশুক
হে বন্ধুদ্বয়, তোমরা শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বিদায় নিলে। আর আমরা ভিজতে ভিজতে বিদায় দিলাম। গুড বাই...

(তারেক মাসুদ, জঃ ডিসেম্বর ০৬, ১৯৫৭ ।। মৃঃ আগস্ট ১৩, ২০১১ এবং  মিশুক মুনীর, জঃ সেপ্টেম্বর ২৪, ১৯৫৯ ।। আগস্ট ১৩, ২০১১)

 


কলকাতায় আবার যাচ্ছে মহাজনের নাও

কলকাতার রুট মিউজিক ফ্যাস্টিভ্যাল’–এ যাচ্ছে সুবচন নাট্য সংসদের নাটক মহাজনের নাওশিকড়ের ডানা হোকডানার শিকড়’ শ্লোগানে কলকাতার দোহার ও লোপামুদ্রা প্রডাকশনস সহজ পরব’ শিরোনামে আগামী ১ থেকে ৪ আগস্ট কলকাতার রবীন্দ্রসদন ও গগনেন্দ্র প্রদর্শণশালায় এ উৎসবের আয়োজন করেছে। উৎসবের সমাপনী দিনটিকে বাংলাদেশ দিবস’ হিসাবে ঘোষনা দিয়েছেন আয়োজকেরা। 
বিকেল ৫ টায় প্রদর্শিত হবে বাউল শাহ আবদুল করিমের জীবন ও দর্শন নিয়ে শাকুর মজিদ রচিত এবং সুদীপ চক্রবর্তি পরিচালিত সুবচনের নাটক মহাজনের নাও। এছাড়াও সমাপনী সন্ধ্যায় লালনের গান পরিবেশন করবেন কুষ্টিয়ার বাউল ফকির লতিফ শাহলোকগান গাইবেন চন্দনা মজুমদার।

এ উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে নাট্যকার শাকুর মজিদ সহ ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদল আগামী ২ আগস্ট বিকেলে জেট এয়ারযোগে কলকাতা যাবেন এবং ৬ আগস্ট বিকেলে দেশে ফিরবেন। উল্লেখ্য ১৮ জুন ২০১০ সালে সুবচন মহাজনের নাও’ নাটকটি মঞ্চে আনে.।বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় ১৯১৬ সালে জন্ম নেয়া সাধক শাহ আবদুল করিমের সংঘাতময় জীবনের তত্বকথা ও তাঁর জীবনদর্শণ নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা এ নাটকটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের তত্ত্বাবধানে দক্ষিন কোরিয়ায় দুটি প্রদর্শনী ছাড়াও দেশের বাইরে ত্রিপুরাজলপাইগুড়িআসামকলকাতা এবং ঢাকার বাইরে কুমিল্লাচাদপুররাজশাহীসিলেটসাভারবিয়ানীবাজারবরিশাল নিয়ে ৭৩টি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। কলকাতার সহজ পরব উৎসবে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন- (মঞ্চে প্রবেশ ক্রমানুসারে) - গায়েন : আমিরুল ইসলাম বাবুলআহাম্মেদ গিয়াসইমতিয়াজ শাওনস রেজাইমরান হোসেনফজলুল হক রাসেল। কথক : আমিরুল ইসলাম বাবুলআহাম্মেদ গিয়াসইমতিয়াজ শাওনস রেজাইমরান হোসেনফজলুল হক রাসেলসোহেল খাঁনশাহ্ সালাউদ্দিনতানভির দিপু। গীতিদল : তানভিরসালাউদ্দিনপাভেলসোহানসবুজআলআমিন। করিম : ফজলুল হক রাসেলইমরান হোসেনআমিরুল ইসলাম বাবুল ও আহাম্মেদ গিয়াস। ইমাম : ইমতিয়াজ শাওন ও আনসার আলী। ডিসি ঃ আনসার আলী। ইউএনও ঃ সোহান। রুহি ঃ পাভেল। আকবর ঃ তানভির। সুনন্দ ঃ সোহান। সরলা ঃ রোকসানা বিনতে রওসন (তুলি)। সাত্তার মিঞা : ইমরান হোসেন। আব্দুর রহমান ঃ আমিরুল ইসলাম বাবুল।
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সৌজন্যে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ সন্ধ্যাটি কৈলাস খের ছাড়াও বিভাশ চক্রবর্তিগৌতম ঘোষজয় গোস্বামীআলোকানন্দা রায়প্রসেঞ্জিত চ্যাটার্জিপরমব্রত চট্রোপাধ্যায়দেবজ্যোতি মিশ্রতন্ময় বোসতেজেন্দ্র নারায়ন মজুমদারশ্রীকান্ত আচার্য্যজয় সরকার প্রমুখেরা উৎসবের নান্দিমুখ হিসেবে থাকবেন বলে আয়োজক সুত্রে জানা যায়। উৎসব পরিচালনা করবেন লোপামুদ্রা মিত্র এবং কালিকা প্রসাদ।

==================
বিশ্ব ফুটবল খেলার নানা রেকর্ড
শেষ হলো সারা বিশ্বের উত্তেজনামূলক ফুটবল খেলা। বিশ্ব ফুটবল কাপে ছিনিয়ে নিলো জার্মানি! বিশ্ব ফুটবল কাপে প্রতিবারই নানা রেকর্ড হয়। তা থেকে কিছু নির্বাচিত রেকর্ড সাতদিনে উপস্থাপনা করা হলোঃ
* আর্জেন্টিনা জিতলে পাঁচ জনের সাথে সেক্স করার ঘোষনা দিয়ে ফেইসবুকে ঝড় তুললেন এক বাংলাদেশী তরুণী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে এ ঘোষনা দেন এই বাংলাদেশী তরুণী।  তার  স্টাটাসের পর, আলোচনা- সমালোচনার ঝড় উঠেছে ফেইসবুকে। মেসির জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত এক স্টাটাসে তিনি লিখেন, “আর্জেন্টিনা আমার পছন্দের টিম। মনে প্রাণে ভালবাসি মেসিকে। আজ মেসির জন্মদিন। আজ মেসি যা চাইতো তাই দিতাম। যদি সেক্স করতে চাইতে তাও প্রাণ খুলে দিতাম।
আর হ্যা, আর্জেন্টিনা যদি এবার বিশ্বকাপ জয় করতে পারে তাহলে আমি পছন্দের ৫ জন মেসি প্রেমিককে আমার সাথে সেক্স করতে দেবো। কে হতে চাও আমার মনের মতো পাঁচ জন!

*বিশ্বকাপ ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন ব্রাজিলের রোনাল্ডো-মোট ১৫ গোল।
* সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচ খেলেছেন জার্মানীর লোথার ম্যাথিউস- মোট ২৫টি ম্যাচ।
* বিশ্বকাপ ফুটবলে দ্রুততম সময়ে গোল হল করেন তুরস্কের হাকান সুকুর। ২০০২ সালের ২৯ শে জুন তৃতীয় স্থান নির্ধারনী খেলায় কোরিয়ার দায়েগু স্টেডিয়ামে মাত্র ১১ সেকেন্ডে দক্ষিন কোরিয়াকে এ গোল দেন তিনি।
* বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে জার্মানীর অলিভার কান হলেন একমাত্র গোলরক্ষক যিনি সোনার ফুটবল পুরস্কার লাভ করেন।
*১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের মুল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ছিল ভারত। কিন্তু খালি পায়ে খেলতে না দেওয়ার কারনে নাম প্রত্যাহার করে নেয় তারা। এরপর ভারত আর বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নি।

* সবচেবেশীবার হেরে যাওয়ার রেকর্ড হল মেক্সিকোর মোট ২০ বার
* ৭৫টি দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলের মুল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও এ পর্যন্ত শিরোপা জয় করেছে মাত্র ৮টি দেশ।
*সর্বোচ্চ ৫ বার বিশ্বকাপ জেতা দেশ হল ব্রাজিল( ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪, ২০০২)।
* বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নেওয়া সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হলেন- নরম্যান হোয়াইটসাইড। ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া হোয়াইটসাইডের বয়স ছিল ১৭ বছর ৪১ দিন।
* ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে মাঠে জার্সি বদল করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে FIFA
* বিশ্বকাপ ফুটবলের একক অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোলদাতা দেশ হল হাঙ্গেরী। ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে তারা মোট ২৭টি গোল দেন।
* বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা একমাত্র খেলোয়াড় হলেন ভিভ রিচার্ডস।
তথ্যঃ সংগ্রহীত

==================
সুচিত্রা সেনের স্মৃতি সংরক্ষণে সুপ্রিম কোর্টের রায়

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়ি সংরক্ষণ স্মৃতি সংগ্রহশালা নির্মাণের নির্দেশ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় গত কাল ৯ জুলাই বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে রায়ে বলা হয়েছে, কালজয়ী অভিনেত্রী সুচিত্রা সুচিত্রা সেনের স্মৃতি সংরক্ষণ করা আমাদের জাতীয় সাংবিধানিক দায়িত্ব তার অসামান্য অভিনয় দক্ষতা হলমুখী করেছিল তামাম বাঙালিকে বাংলা সিনেমাকে জনপ্রিয় করে তুলতে তার অবদান অনস্বীকার্য রায়ে বলা হয়, সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি থেকে যদি এখন পর্যন্ত ইমাম গাযযালী ইন্সটিটিউটকে উচ্ছেদ করা না হয়ে থাকে তাহলে অনতিবিলম্বে এই প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্ছেদ করে সেখানে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালার কাজ শুরু করার নির্দেশ দেয়া হলো বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ গত মে রায় ঘোষণা করেন বেঞ্চের অপর দুই বিচারক হলেন, বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ৫৯ পৃষ্ঠার রায়টি লিখেছেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অপর দুই বিচারপতি

রায়ে বলা হয়, ইমাম গাযযালী ইন্সটিটিউটের আইনজীবী সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি থেকে এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরিয়ে নেয়ার জন্য দুই মাসের সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করেন 

কিন্তু তিন বছর অতিবাহিত হলেও এটিকে সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেননি কারণে আপিল বিভাগ মনে করে, এটা আদাতের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা ধরনের প্রতারণা কঠোর ভাষায় তিরস্কারযোগ্য


১৯৩১ সালের এপ্রিল জন্ম নেয়া সুচিত্রার শৈশব-কৈশোর কাটে পাবনার এই পৈত্রিক বাড়িতে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়িকার শৈশব কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটির অবস্থান পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তেন সুচিত্রা পরিবারসহ ১৯৫১ সালে ভারতে চলে যাওয়ার পর বাড়িটি অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত হয় এবং এখানে কিছুদিন সরকারি লোকজন বসবাস করতেন এরপর ১৯৮৭ সালে তত্কালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমান বাড়িটি বাত্সরিক চুক্তিভিত্তিতে ইমাম গাযযালী ট্রাস্টকে ইজারা দেন এরপর সেখানে ইমাম গাযযালী ট্র্াস্টের নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৯১ সালের ১৮ জুন ইমাম গাযযালী ট্রাস্ট বাড়িটি স্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার আবেদন করে ওই বছরের আগস্ট মাসে ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের স্থায়ী বন্দোবস্ত না দিয়ে আবারো বাত্সরিক ইজারা দেয় ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় ১৯৯৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ইজারা বাতিল করা হয় কিন্তু পরে বকেয়া পরিশোধ করে ওই বছরের ১৫ আগস্ট পুনরায় ইজারা নবায়ন করিয়ে নেয়া হয় ২০০৯ সালে ওই বাড়ির লিজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সরকার বাড়িটি ছেড়ে দেয়ার জন্য ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে একটি নোটিস দেয় নোটিসে বাড়িটি সুচিত্রা সেনের স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় পরে বছরে ইমাম গাযযালী ট্রাস্ট সরকারের দেয়া নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করে প্রতিষ্ঠানটির ওপর স্থিতিবস্থা জারি করেন ২০১১ সালের ১৩ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে এই বাড়িটি বেদখলে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয় এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) আরেকটি রিট করে হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিটে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ দু'রকম আদেশ দেয়ায় আপিল বিভাগ বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের আরেকটি ডিভিশন বেঞ্চে পাঠায় পরে ওই বেঞ্চ থেকে রায় আসে এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে প্রতিষ্ঠানটি গত মে মাসে আপিল বিভাগ তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়
*দৈনিক ইত্তেফাক থেকে

----------------
মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী সুবীর চৌধুরী
আর ফিরে তাকাবেন না!

বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের পরিচালক ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের অন্যতম ট্রাস্টি শিল্পী সুবীর চৌধুরী (৬১) সোমবার ভোরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে চিকিত্সাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেছেন। মস্তিষ্কের শিরায় ক্যান্সারজনিত জটিলতায় তিনি ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়েসহ অগণিত বন্ধু ও সুহূদ রেখে গেছেন। তিনি বাংলাদেশের চিত্রকলা আন্দোলনকে সঞ্জীবিত ও দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের চিত্রকলাকে পরিচিতকরণের জন্য নিরন্তর কাজ করেছেন ও বহু প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ঢাকা এশীয় দ্বি-বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় তার অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে।
সুবীর চৌধুরী ১৯৫৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ষাটের দশকের মধ্যপর্যায়ে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনকালে, তিনি যখন স্কুলের ছাত্র, তখন কারারুদ্ধ হন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কলকাতাস্থ লিয়াজোঁ অফিসের সঙ্গে যুক্ত থেকে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৭৪ সালে চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্মাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রকলা বিভাগে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন ও পরবর্তীকালে এই বিভাগের পরিচালক হন। ২০০৪ সালে তিনি বেঙ্গল গ্যালারির পরিচালক হন। পরবর্তীতে তিনি বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও ট্রাস্টি হন।
*দৈনিক ইত্তেফাক থেকে

কবিতা অবলম্বনে, 
কবির অভিনয়ে, কবির পরিচালিত
নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ
=====================মনি হায়দার

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিয়াল্লিশ বছরে যেখানে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, তার সিকিরও সিকি মাইলও যেতে পারেনি। কেনো পারেনি, তার উত্তর বিবিধ, বিচিত্র এবং অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের ক্ষমাহীন ব্যর্থতা। অথচ পাশের দেশ ভারতের ছোট্ট রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র গল্পের বহুমাত্রিকতায়, নির্মাণের কৌশলে, বাজারের প্রবাল্যে এগিয়ে গেছে বহুদূর। সেই চলচ্চিত্র দেখে আমরা চমকিত হই, আলোড়িত হই। আর নিজের দেশের চলচ্চিত্রর বেহাল দশার জন্য দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করি। আমরা, বাংলাদেশের মানুষ, যারা একটি মাত্র ভাষায় কথায় বলি, লিখি, একক ভাষার অন্তরনিহিত ঐক্য ও পরাক্রম শক্তিকে ব্যবহার করে চলচ্চিত্রের মহৎ যাত্রায় অধিষ্ঠিত হতে পারিনি।

এতোসব ব্যর্থতার মধ্যে কখনও কখনও দু একটি চলচ্চিত্র ঝিলিক দেয়। জানান দেয়- ব্যর্থতার পাশে সাফল্যও আছে। সম্প্রতি বলাকা সিনেমা হলে দেখলাম তরুণ কবি ও চলচ্চিত্রকার মাসুদ পথিকের চলচ্চিত্র নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ। কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতাকে আশ্রয় করে মাসুদ পথিকের চলচ্চিত্র প্রয়াস।
চলচ্চিত্রটির প্রথম দৃশ্যই আদি, অকৃত্রিম, নয়ন মনোহর গ্রাম। অবশ্য চলচ্চিত্রটির আখ্যান গড়ে উঠেছে  গ্রাম বাংলার পটভূমিতেই। যদিও শেষের দিকে শহরের একটা অংশ আছে। সেটা গল্পেরই প্রয়োজনে এসেছে। নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণচলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র অবশ্যই নেকাব্বর। কে এই নেকাব্বর? এই নেকাব্বর হাজার বছরের লৌকিক ও গ্রামীণ বাংলার বিশাল মানচিত্র থেকে উঠে আসা এক সহজ, প্রকৃতিপ্রেমিক, নারীর প্রতি প্রণয়াসক্ত ভূমিপুত্র, কিন্ত প্রয়োজনে প্রবল দ্রোহী, এবং অবশ্যই লড়াকু। মনে হয়, নেকাব্বর শিল্পী সুলতানের আঁকা সেই প্রাচীনকালের মাটি ফূঁড়ে উঠে আসা পেশীবহুল বাঙালির এই সময়ের প্রতিনিধি। 

চলচ্চিত্র কবিতার পটভূমি একটি গ্রাম। গ্রামের সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবন। সেই নিস্তরঙ্গ জীবনে একটু আধটু ঝড় ওঠে যখন ফাতেমার সঙ্গে নেকাব্বরের দেখা হয়। দুটি তাজা তরুণ প্রাণের মধ্যে আকাশ ভেঙ্গে নেমে আসে মিলনের বজ্রপাত। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সেই আদিকালের প্রথা, সমাজ এবং সমাজপতি। সঙ্গে যুক্ত হয় ফাতেমার বাবা ও মা। ফাতেমার বাবা তালুকদারের বাড়িতে চাকরি করে।
নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণচলচ্চিত্রটির সময়একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সময়চলচ্চিত্রটির আখ্যান জুড়ে নির্মাণ করে নিজস্ব বলয়। ঘটনার সময় ষাটের দশকের শেষ ভাগ, যখন বাংলা ও বাঙালির হাজার হাজর বছরের লড়াইয়ের শেষ পাদ। । দিকে দিকে জল্বছে আগুন। ঢাকার সংগ্রাম, শ্লোগানের ঢেউ আছড়ে পড়ছে গ্রাম থেকে গ্রামে। গ্রামের শোষিত মানুষের পক্ষে কাজ করেন খোন্দকার। তিনি চেষ্টা করেন গ্রামের ভূমিহীন মানুষদের সংগঠিত করে একটি কাতারে দাঁড় করাতে। দুই দিকের স্রোত মিলিত হয় একটি মোহনায়, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংস্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম- এর শীর্ষবিন্দুতে।
তালুকদারের সঙ্গে লড়াই জমে ওঠে। পক্ষ দু’টি। একটি সাধারণ ভূমিহীন মানুষ। অন্যদিকে তালুকদারের মতো মানুষ। একরাতে নেকাব্বরের গরুটাকে তালুকদারের লোকেরা  জবাই করে রেখে যায় গোয়ালে। গরুটা কেবল একটা গরু ছিল না নেকাব্বরের কাছে, ছিল বন্ধু।  সুতরাং লড়াই বাঁধে সাধারণ মানুষ আর তালুকদারের মধ্যে। তালুকদার আহত হয়। আসে পুলিশ। ধরে নিযে যায় খোন্দকারকে। নেকাব্বর পালিয়ে আসে শহরে। ওঠে পুরোনা ঢাকার ইতিহাস খ্যাত বিউটি বোডিংএ। যেখানে দেখা হয় প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। প্রকৃতির সন্তান নেকাব্বর দীক্ষা নেয় সরসরি লড়াইয়ে নামার। আসে মুক্তিযুদ্ধ। স্বাভাবিক প্রণোদনায় নেকাব্বর যোগ দেয় যুদ্ধে। পেছনে রেখে যায় ফেলে আসা সবুজ গ্রাম আর সবুজ কন্যা- ফাতেমাকে।

যুদ্ধে পায়ে গুলি লেগে আহত হয় নেকাব্বর। স্বাধীনতার পর নেকাব্বর হিসাব মেলাতে পারে না। কেমন যেন হিসাব উল্টোপাল্টা। পরিণামে জায়গা হয় পাগলাগারদে। বিয়াল্লিশ বছর পর পাগলাগারদ থেকে বের হয়ে আসে নেকাব্বর। বৃদ্ধ, দুহাতে দুটি ক্র্যাচ। একাত্তরের শাণিত গেরিলা আজ বিপন্ন জীবনের ভার নিয়ে বিব্রত। কিন্তু ফেলে আসা দিনের মহার্ঘ স্মৃতি, ফাতেমেরা খোজে যায় গ্রামে। খুঁজে ফেরে মায়ের কবরের উপর ওঠা লেবু গাছ, মাটির সোধা গন্ধ, আর বকুলগন্ধি ফাতেমাকে।
গ্রামের এক বয়সী নারী জানায়Ñ সব শেষ। ফাতমাকে একাত্তরে পাকিস্তানীরা ধরে ক্যাম্পে রাখে। স্বাধীনতার পর ফাতেমা একটি ছেলে জন্ম দিয়ে মারা গেছে। সেই ছেলেটি এখন পাগল, রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে। এক সময়ে মাঠে দেখা হয় নেকাব্বরের আর ফাতেমার পেটের সন্তানের। পাগল গোগ্রাসে মাটি খায়, আর জানায়Ñ ওর খুব খিদে। একাত্তরের নির্দেস জাতকের কী অপরাধ? রাষ্ট্র কী দায় নিয়েছে? নেয়নি বলেই সে মাটি খাচ্ছে। নিরন্তর জীবনাবেগের স্রোতে এই প্রতিবাদের জবাব কে দেবে?
এইসব দগ্ধপ্রান্ত দেখে নেকাব্বর আবার ফিরে আসে শহরে, ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটে পথে পথে। দেখা হয় শিখা চিরন্তনে কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে। এক সময়ে পথেই মারা যায়, প্রকৃতির সন্তান, একাত্তেরের যীশু নেকাব্বর।

একটা সাদামাটা বা আবেগে ভারাক্রান্ত ছবি নির্মাণ করেননি কবি ও চলচ্চিত্রকার মাসুদ পথিক। ছবির আখ্যান যদিও আমাদের ছাপান্না হাজার বর্গমাইলের ভূগাল  ও গুণের কবিতা থেকে নিয়েছেন কিন্তু প্রকৃতি ও মানুষের জীবনের পারস্পারিক দ্বন্ধ ও দর্শনের অভিঘাত রযেছে, তিনি  নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণছবিতে সেই দর্শনও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। যতোদূর ধারণা করিÑ প্রকৃতি, জীবন, মাটি, যৌবন ও সংগ্রামকে আশ্রয় করে বাংলাদেশে এ ধরনের চলচ্চিত্র প্রথম।  মাসুদ পথিকেরও প্রথম চলচ্চিত্র। আশা রাখিÑ তিনি আরও বহুদূর যাবেন। এবং একটি ছবি থেকে আর একটি ছবি নির্মাণ করে নিজেকেই অতিক্রম করবেন।
নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণছবির সব শিল্পীরা চমৎকার অভিনয় করেছেন। নেকাব্বরের চরিত্রে জহির জুয়েল জটিল অভিনয় করেছেন। গ্রাম ও ওর শারীরিক কাঠামো মিলেমিশে একাকার হয়েছে। ফাতেমা তার চরিতে চরিত্রে সিমলাও দারুণ দেখিয়েছেন। বাকিরা- মামুনুর রশীদ, প্রবীর মিত্র, এহসানুর রহমান যথার্থ অভিনয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ ও অসীম সাহাকে নতুন আঙ্গিকে দেখে ভালো বেশ লেগেছে। কবিতা অবলম্বনে, কবির অভিনয়ে, কবির পরিচালিত নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ একটি মাইল ফলক।

=============

আবু হাসান শাহরিয়ারের জন্মদিন
আবু হাসান শাহরিয়ার বাংলাদেশের একজন কবি, ছড়ালেখক এবং সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতিমান। পেশাগতভাবে তিনি দৈনিক পত্রিকা আমাদের সময়-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জে, ২৫শে জুন ১৯৫৯ তারিখে। পরিণয়সূত্রে কথাসাহিত্যিক মনিরা কায়েস তাঁর জীবনী সঙ্গিনী।

ব্যক্তিজীবনে স্পষ্টবাদী, দৃঢ়চেতা ও আপসহীন হলেও তিনি রোম্যান্টিক কবিতার জন্য বিখ্যাত। তাঁর কবিতা গীতল এবং ছন্দোময়তার কারণে শ্রুতিমধুর। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন এবং সংকলন গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। 

তার বেশিরভাগ কবিতা দৃষ্টান্তবাদ-সমর্থিত। কবিতা তাঁর মূল বিচরণ ক্ষেত্র হলেও তিনি কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ এবং সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও মেধাবী অবদান রেখেছেন। তাঁর গদ্য একইসঙ্গে স্বাদু এবং বিশ্লেষণধর্মী। তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৪০টি।
আবু হাসান শাহরিয়ারকে সাতদিনের শুভেচ্ছা।

--------------
নগ্ন যীশুঃ অভিবাদন ব্রুকেয়ার!
ওমর ফারুক লুক্স

অবশেষে যীশু খ্রীষ্টকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করতে সক্ষম হয়েছেন শিল্পী বার্লিনডে ডে ব্রুকেয়ারে। বেলজিয়ামের এই সমসাময়িক ভাস্কর মনে করেন যীশু খ্রীষ্টকে যেভাবে অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল বলে প্রচলিত আছে, তারপর মৃত যীশু খ্রীষ্টের লজ্জা নিবারণের জন্য তাকে শুধু একটি নেংটি পরিয়ে রাখা, একটি হাস্যকর সংস্কার। 

তিনি আধুনিক শিল্পী ও শিল্পানুরাগীদের দু হাজার বছরের এ পুরোনো সংস্কার থেকে মুক্ত করতে চান। সেজন্যই শিল্পকর্মটিকে প্রদর্শন করা হয়েছে ১৫ শতকে আঁকা কয়েকজন বিখ্যাত শিল্পীর কয়েকটি যীশুর প্রোর্টটের সঙ্গে। শিল্পীর এ কাজ ইউরোপের খ্রীষ্টান ধর্মাম্বলীদের ধর্মানুভূতিতে মোটেও আঘাত করতে সক্ষম হয়নি, বরং বেশির ভাগ দর্শকই শিল্পীর যুক্তিকে গ্রহণ করেছেন। 

যারা গ্রহণ করেননি তাদেরকে চোখ আর কপাল কুচকে দূরে সরে যেতে দেখা গেছে, কিন্তু যীশুর উলঙ্গ ভাস্কর্যটি দেখে কাউকে চাপাতি নিয়ে ছুটোছুটি বা প্রদর্শনী হলে আগুন লাগাতে দেখা যায়নি।এই আলোচিত শিল্পকর্মটির এক্সিবিশন টেকনিক ও কনজারভেশনের দায়িত্ব পালন করেছেন একজন বাংলাদেশী নাস্তিক শিল্পী।

------------------
বাংলাদেশের তরুণীরা শাম্বা নাচ নাচতে না পারলেও
প্রিয় দলের জার্সি পড়ে স্ফুর্তিতে মাতাল


সারা বিশ্বে জমে উঠেছে বিশ্ব ফুটবল। বাংলাদেশেও তার ঢেউ ছড়িয়ে পরছে। প্রতিদিনই নানা ধরণের মজার মজার খবর প্রকাশ পাচ্ছে। বাংলাদেশ অংশ না নিলেও বাংলাদেশের তৈরি কোটি কোটি টাকার জার্সি বিক্রি হচ্ছে। এক জেলায় জেলা প্রশাসক ঘোষণা দিয়েছে, তার ‘রাজ্যে’ (জেলায়) কোনো ‘প্রজা’ বিদেশি পকাতা উড়াতে পারবে না। আবার কেউ জমি বিক্রি করে প্রিয় দলের বিশাল পতাকা বানাচ্ছে। নিজের বাসা বাড়ি সাজাচ্ছে প্রিয় দলের জার্সির মতো করে।
খবরে আরো প্রকাশ, দেশ পারেনি দুই নেত্রিকে এক করতে; কিন্তু ফুটবল পেরেছে। তার মানে শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়া দু’জনেই বার্জিলের সমর্থক। আমাদের তরুণীরা শাম্বা নাচ নাচতে না পারলেও প্রিয় দলের জার্সি পড়ে স্ফুর্তিতে মাতাল হয়ে উঠছে। আর বিদেশি তরুণীদের কথা বাদই দিচ্ছি। আবার কেউ কেউ আর্জেনটিনা আর ব্রাজিল নিয়ে বাজি ধরে বাজিমাত করতে চাচ্ছে। দেখা যাক, কোন দল ফাইলানে বাজিমাত করতে পারে। কে কতো গোল দিতে পারে!


----------------
নিজের কাছে ফিরে এলেন নাজিব

চিত্র প্রদর্শণী বলতে আমরা বুঝি র্নির্দিষ্ট গ্যালারীতে দেয়াল জুড়ে ছবির সমাবেশ। কোন শিল্পীর বাসগৃহে বা স্টুডিওতে চিত্র প্রদর্শণী আমাদের দেশে এক অভিনব আয়োজনআর এ অভিনব আয়োজনটিই করলেন শিল্পী নাজিব তারেক। তাঁর মুহম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটিস্থ বাসভবন কাম স্টুডিওতে হয়ে গেল এ ভিন্ন ধরনের আয়োজন। ২৯ মে ২০১৪ তে শুরু হওয়া এ প্রদর্শণী শেষ হওয়ার কথাছিল ১ জুনকিন্তু দর্শক সমাগমের সুবিধার্থে তা কএক দফা বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

তিনটি কক্ষের স্বাভাবিক আসবাবপত্রকে রেখেই দেয়ালে দেয়ালে ছবি ঝোলানোকিছু ছবি দেয়াল বা টেবিলের সাথে হেলান দেয়াটেবিলের ওপর বিশাল এলবামেও বেশ কিছু ছবি। দর্শক এক ঘরোয়া আমেজে ছবি দেখছেনশিল্পীর সাথে কথা বলছেনআড্ডা হচ্ছে উপস্থিত জনদের নিয়ে। এ এক অন্য রকম আয়োজন।
১৯৮৮-১৯৯৬ ঢাকা চারুকলা কেন্দ্রিক সকল আয়োজনের নেপথ্য চিন্তক নাজিব ১৯৯৬ এর পর নিজেকে গুটিয়ে নেন মূলধারার শিল্প চর্চা থেকে। তবে নেশা পেশায় সক্রিয় ছিলেন কবিতা ও কবিতার চিত্রায়ন নিয়ে। লিটলম্যাগজাতীয় দৈনিকটেলিভিশন চ্যানেল ঘুরে ২০১১ সালে বহুজাতিকের লোভনীয় চাকুরী ছাড়লেন ঢাকা শহরে এসে ছিলাম ছবি আঁকবো বলেঅনেক হলো এবার ফেরা উচিত। এ প্রর্দশনী সে ফেরার আংশিক ঝলক মাত্র।

প্রদর্শণী শেষ হলেও নাজিব তারেকের গ্যালারী কাম স্টুডিও পরিদর্শনের সুযোগ কিন্তু শেষ হচ্ছে না। আগ্রহীরা যে কোন সময় ফেসবুকের facebook.com/NajibBD পেজের মেসেজ অপশন ব্যবহার করে শিল্পীর সাথে যোগাযোগ করে ঘুরে আসতে পারেন নাজিব তারেকের চিত্র ভাবনার ভূবনে।

================


আমি যে আর সইতে পারি নে

এই সিডিটির জন্য অনেক দিন অপেক্ষায় ছিলাম! শুধু আমি নইআরো অনেকে। এতো ভালো সোমা কিভাবে গায়! রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিশাল ভাণ্ডারে সোমার ডুব টের পাওয়া যায় তার গাওয়া গানগুলি শুনতে শুনতে...


আমি শুনেই যাচ্ছি আমি যে আর সইতে পারি নে’, ‘এরে ভিখারি সাজায়ে কী রঙ্গ তুমি করিলে’, ‘আলোর অমল কমলখানি কে ফুটালেকিম্বা তোমার শেষের গানের রেশ নিয়ে কানেপ্রিয় এই গানগুলি। এটিই সোমার প্রথম সিডি অথচ যেমন দারুণ তার গানগুলির বাছাই তেমনই সূক্ষ্ম সুরবোধে অপূর্ব তার গায়কী। অনেক অভিনন্দন সোমা, এই ডুব নিরন্তর গভীরেই থাকুক।

-রাকীব হাসান
=====================


প্রাযুক্তিক কলকৌশল যত বাড়ছে আমরা ততোই মানসিক ভাবে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছি

কবি শহীদ কাদরী আয়োজিত 'একটি কবিতা সন্ধ্যা'র আয়োজন অনুষ্ঠিত হলো ৮ জুন ২০১৪ রোববার বিকেলে। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠান তিন বছর পার করলো। নিউইয়র্কের জ্যামাইকার একটি মিলনায়তনে প্রথমেই ছিল আড্ডাপর্ব। কবিতা সন্ধ্যা পরিচালনা করেন আবৃত্তিকার জি এইচ আরজু। আড্ডায় কবি শহীদ কাদরীর সাথে অংশ নেন কবি তমিজ উদদীন লোদী ও কবি ফকির ইলিয়াস। 


দ্বিতীয় পর্বে ছিল বাংলাদেশের কবিদের কবিতা পাঠ। প্রয়াত কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেনের কবিতা আবৃত্তি করেন মিজানুর রহমান প্রধান। কবি শিহাব সরকারের কবিতা আবৃত্তি করেন এজাজ আলম। কবি আবিদ আজাদের কবিতা আবৃত্তি করেন ইভান চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল স্বরচিত কবিতা পাঠ। এই পর্বে কবিতা পড়েন বদিউজ্জামান নাসিম, কাজী জহিরুল ইসলাম এবং চারু হক। আর ছড়া পাঠ করেন মনজুর কাদের।
এই অনুষ্ঠানে কবি এবং বলেন, ‘প্রাযুক্তিক কলকৌশল যত বাড়ছে আমরা ততোই মানসিক ভাবে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছি’।

================
কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি

                                                
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত গতিতে কার্যকর করার দাবিতে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালি সংস্কৃতি পরিষদ, কানাডা শাখার উদ্যোগে জয়দত্ত বড়ুয়ার সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাখ্যাতিমান অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। 


অনুষ্ঠানে রাকীব হাসান, নাহার মনিকা, সাদেরা সুজন, মুন্সী বশীর, শাহ বিল্লাহ, সাজ্জাদ হোসেইন সুইট, দিলীপ কর্মকার, দিদার মাহমুদ ভুঁইয়া, সরোজ দাস, সাজেদা হোসেন, জিয়াউল হক জিয়া, আনোয়ার হোসেইন, কাজী রমজান রতন, মাসুদ সিদ্দিকী, দিলীপ কর্মকার, বিদ্যুৎ ভৌমিক, শরীফ ইকবাল চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান রুবেল, শামসাদ আরা রানা, সুনীল গোমেজ, অনীল গোমেজ, মিন্ট্র হাৗলাদার, সুকমার চক্রবর্তী, বিমলেন্দু রায়, হাজী মাসুদুর রহমান, রশীদ খান, মুরাদ হোসেন, সদেরা সুজন, দিলীপ চৌধুরী, আলম খান, ইসমাইল হোসেন, ওসমান হায়দার বাচ্চু, শাহাজান ভুঁইয়া, মেহেদী হাসান লিমন, সাথী নওশের, আফাজ উদ্দীন তোতন, রায়হান, রনজয় বড়ুয়া, সুকান্ত বড়ুয়া, আরিয়ান হক, তপন বড়ুয়া, নাসির উদ্দীন, সহিদ রাহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রবাসীদের ভূমিকাও গুরুত্ত্বপূর্ণ।
===================

বেনজির আহমেদ যান, আমরাও আসছি


চলে গেলেন আরো একজন ভালো মানুষ, চিরকুমার বেনজির আহমেদ। যার মুখে সব সময় লেগে থাকতো মিষ্টি হাসি। সাংবাদিক হিসেবেই তিনি ছিলেন সবার প্রিয়। এই প্রকৃত অমায়িক, নির্লোভী মানুষটিকে নিয়ে তাই প্রভাষ আমিন লিখেছেন- 'কাগজের সাবেক সম্পাদক বেনজির আহমেদের মৃত্যুসংবাদ সকালেই মনটা খারাপ করে দিলো। আকাশ ভেঙে নামা বৃষ্টি আমাকেও কাঁদিয়ে গেল।...মানুষ মরে গেলে, আমরা সবাই সত্য হোক, মিথ্যা হোক বলি, বড় ভালো লোক ছিলেন। কিন্তু সত্যি করেই বলছি, বেনজির ভাইয়ের মতো সরল, সৎ, রুচিশীল, ভালো মানুষ আমি খুব বেশি দেখিনি। বিশ্বাস করুন, অনেক খুঁজেও, অনেক ভেবেও বেনজির ভাইয়ের বিরুদ্ধে বলার মতো একটি কথাও পেলাম না।'  (দ্রঃ বাংলা ট্রিবিউন, জুন ৩, ২০১৪, ঢাকা। )
আমরা প্রভাষের সাথে ২০০% একমত। বেনজির আহমেদ যান। আমরাও আসছি।



===============
মৃত্যুর সাথে লড়ছেন গোবিন্দ হালদারঃ পশ্চিম দিগন্তে সূর্য ডুবছে

বাংলাদেশের বন্ধু গোবিন্দ হালদারকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধা মৈত্রী সম্মাননাদিয়ে সম্মানিত করে। এর আগে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ত্রাণ তহবিল থেকে গোবিন্দ হালদারকে ১৫ লাখ টাকাও অনুদান দেন। কিন্তু কোন আর্থিক সাহায্যই ভোগের সুযোগ তাঁর হয়ে ওঠেনি।


বর্তমানে ৮৪ বছরের বয়োবৃদ্ধ একাত্তরে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ সীমান্তের বাসিন্দা গোবিন্দ হালদার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আকাশবাণী কলকাতার কেন্দ্রে বসে একের পর এক লিখে গেছেন কালজয়ী চেতনা উদ্দীপক সব গান। সে গানগুলো একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিসেনাদের উদ্দীপ্ত করেছে পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে।বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছে আমাদের মুক্তিসংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বীর কলমসেনানী গীতিকার গোবিন্দ হালদারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়িত্ব নেয়ার। বঙ্গবন্ধু সরকার যেভাবে কবি নজরুলকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে নাগরিকত্ব এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিয়েছিলেন একইভাবে গোবিন্দ হালদারের প্রতিও একই উদ্যোগ নেয়া যায়।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন