কবিতা


মাহবুবা ফারুকের কবিতা খুঁজে ফিরি

বিকেলের নীল রোদ গায়ে মেখে
সূর্যের উল্টো দিকে হাঁটতে হাঁটতে
বড় হতে থাকি
তারপর হারিয়ে যাই
আকাশের ছায়া থেকে দূরে
বাতাসের বেহালায় করুণ আবহ সংগীত
শেষ রোদকে আঁকড়ে ধরে
থর থর কাঁপে বাঁশবন– হারানোর ভয়ে
এক জীবন সন্ধ্যা পেরিয়ে
নিজের ছায়ার ভেতর পথ খুঁজি  
শৈশবের মায়া– পুতুল খেলার ঘর  
সুতোয়  গাঁথা  পালক
কেউ আমাকে ঘর দিতে পারেনি
ডাকঘরেও নেই ঘরের ঠিকানা
ঘর আমার দূরে কোথাও।  


=======
জাকিয়া এস আরার তিনটি কবিতা
ফিউশন
……………………
আমগন্ধী কবিতা বিবমিষা জাগে
উদ্বাস্তু কবিতায় কমেনা  উৎকট ঘ্রাণ
পরাশ্রিত ভাবকল্প দূরে ঠেলে দিয়ে
আপাততঃ দোহাতি কবিতায়
চোখ বুলাই, বাস্তব আর মিথের
সহবাসে, কোলাজ সলাজ লাগে!
বুঝি চাইনিজ আর মোগলাই ফিউশন,
নাকি ভাবনাগুলো "মিউট" হয়ে আছে।

প্রযুক্তি বার বার বেশ প্রচ্ছদ পাল্টায়
"পথে হল দেরি"র সুচিত্র সেনের মতো।

প্রযুক্তির ধারণা পরিবর্তন হয় ;
তাহলে তো "ম্যাপল গ্রোভের" রায়ান ঠিকই
বলেছিলো,"ইউ আর টুও ওল্ড টু ক্যাপচার দিজ ওয়র্ল্ড!


যদিও সাঁতার জানিনে
…………………………
আধুনিকতার সজ্ঞা খুঁজতে খুঁজতে
রাতের বকুলগুলো সব ঝরে গেল
চশমা চোখে জীবন মানচিত্রে
বোধের রাজ্য চষে বেড়াচ্ছি, ভাতঘুমে
বাকবাকুম পায়রাগুলো অচেতন,
যারা নাকি সারা উঠোন জুড়ে
মনের সুখে খেত শষ্যদানা!
আর এই দিকে দুধশাদা শিশুগুলো
মায়ের কোলে ফিরতে শুরু করেছে,
রক্তস্নাত হয়ে, ভাষাহীন জননীরা
বিচার চাইতে ভুলে গেছে!
এ গ্রহ কাদের? ঈশ্বর কাদের?
কোনো অভিধানে লেখা নেই,
মনে হয়, থাকবেনা কখনও
তবে এস আজ পৃষ্ঠাগুলো
ছিঁড়ে ফেলি, ডাস্টবিন ভরে ফেলি,
ফুলগুলো ফুটতে না ফুটতেই
ক্রমশঃ আবর্জনা হচ্ছে, আমরা
সুবাস নিতে পারছি না, মেঘগুলো
কালো হচ্ছে কিন্তু বৃষ্টি হবেনা,
বোধের পাড় ভেঙে যাচ্চে, এরপর
প্রতিবাদের হাতগুলোও খসে পড়বে
ডুবে যাওয়ার আগে  এস একবার
চেষ্টা করি, যদিও সাঁতার জানিনে!


বাস্তুহারা প্রলাপ
…………………………
উদ্বাস্তু পদ্যের মতো হামলে  পড়েছো,
বিস্তার করছো সভ্যতার জরায়ু,
মানব দেহের তাপ বাড়াচ্ছ আর
সেধে সেধে বিজ্ঞানের রঙ ঠঙ
দেখছো, পজিটিভ এবং  নেগেটিভ
দুটো অংশে নিজেকে  বিভক্ত করে
সার্কাসের দর্শক  সাজিয়েছো পৃথিবীকে;
অন্য গ্রহগুলো হতভম্ব!
সভ্যতা তো সাতপাঁক ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত
আর তারা গর্দভ সাজতে চায়না, অথচ
তুমি পা ছড়িয়ে বসে আছো!
যেনো এক অবুঝ বালক, যে নাকি
বায়না ধরেছে, অসময়ে বৃষ্টি হোক্!

---------
মৌসমী রহমানের গুচ্ছ কবিতা

অচেনা শহর
চারুবালা তুমিও
তুমিও এখন শুধুই নারী।
একুশ ব্ছর পর চীরচেনা স্টেশনে
ফিকে সাদা শার্ট, হাতে বাজারের ব্যাগ,
তোমার অপ্রস্তুত চাহনী,
লজ্জা আর লুকনো ভালোবাসায়
আচ্ছন্ন করে ছিলো ক্ষনকাল।
তোমার চুলে ত্রিফলা তেল
শাড়িতে  ন্যাপথলিনের গন্ধ
আচঁলে সাঁটা লন্ড্রি স্লিপ
চোখে চোখ রেখে সরল সংলাপ,
এসব মাথায় নিয়ে ভোর করেছি,
খুন হয়েছি বহু রাত।
আমাদের পুরনো দালান
স্যাঁত স্যাঁতে পড়ার রুম,
শ্যাওলা পড়া উঠোনে
তোমার নিটোল দুটি পা,
ছিলো বড্ড বেমানান।
কেবলই মনে হতো পেরুতে চাও
আটপৌর জীবনের চৌকাঠ।
আশ্বিনের নিমন্ত্রণে
তোমার কাজল পরা চোখ,
উচ্ছ্বল হাসির ঢলে
ভেসে গিয়েছিলো
আমার অনাগত আগামীর স্বপ্ন শিশুরা।
ভালোবাসার অসজ্জিত বাগান
তুমি তো বুনো ফুল নও
তাই নস্ট করিনি সুনিপূন সুন্দর  সম্ভার।
তোমার কাঁধে কাশ্মিরী শাল
কালো ফ্রেমের  চশমা,
দামী পারফিউম,
আজ  বড্ড অচেনা এই শহর।
ব্যাবসায়ী বর, বনেদী ঘর
অভিজাত বাড়ি
তুমি যেন হল ঘরের
ওক কাঠের টেবিলে কস্টি পাথর প্রতীমা।
ফুরিয়ে যাওয়া আমি
প্রাণ ভরে নিঃশ্বাসে শুষে নেই
তোমার রাজকীয় শরীরের গন্ধ,
নির্বাক দাঁড়িয়ে দেখি
তোমর নিথর চোখ হারিয়ে গেছে,
মিশে গেছে মানুষের ভীড়ে।
চারুবালা তুমি তো ধ্রবতারা
আমার বুকেও আকাশ আছে
তুমি নও তো বেশী দূরে।
.........
সম্পর্ক
বেঁধেছি তোমায়
নামহীন সখ্যতার সূঁতোয়
অনিরুদ্ব দূরের মাঠে  দৃষ্টি আট্কে যায়
পড়ে থাকা আকাশের খাঁজে ।
প্রাণ দূর করে  তার ক্লান্তি
জমে থাকা দীর্ঘঃশ্বাসে
অনুভবে ছুঁয়ো এই মন
পরিত্যাক্ত উঠোনের
দোলন চাঁপার বিষন্ন আদরে।
দেখেছি তোমায়
অদেখা গহীনের জলে
উর্বর রাতের কোলে,
টিম টিমে জ্যোৎস্না মাখা বৃষ্টিতে।
ভাঙ্গা স্যুট্কেসে যত্বে তুলে রাখা নক্সিকাঁথায়।
হাভাতের ঘরে এক মুঠো পোলাউ
স্বর্গের অমৃতের কথা বলে।
একেঁছি তোমায়
কয়েকটি আচঁড়ে ক্যানভাসে ফুটে ওঠা
শিল্পীর স্বকীয় শৈল্পিক সত্ত্বায়।
কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
সম্পর্ক হলো কৌলীন্য বসন্তি বাতাস,
ফিরে ফিরে আসে প্রনয় প্রলয়ের
পাগলামি নিয়ে ।
কখনো কার্পাস তুলোয়
এক ফোটা তাঁজা রক্তরূপ ।
বিনিবৃত্ত,
সোনার কঙ্কন বিক্রি হয়ে গেছে
চক চকে আধূলীতে।
ওপারে সওদাগরের সুসজ্জিত পানসী
প্রতিশ্রুতি পড়ে আছে কোথাও,
রাত সুখ দ্যায়
সকাল বলে দ্যায় চলার কথা
কোলাহল ক্রমশও বাড়ে,
অশ্ব্খুড়ের ধূলীতে
ঢেকে যায় দিগন্তের বলিরেখা।

এপারে আমি পার ভাঙ্গা
নদীর শব্দ শুনি
পাপ নাকি পরিতাপ
পুরে পুরে সভ্যতা
খুঁজে জীবনের
কংক্রিটের রাস্তায়।
সমূদ্রে মিশে যায় উত্তাপ্ত লাভা
কপলে ফুটে আছে
কপালের লেখা।
..................................................................... 


পরবাস
কালো রাত শুষে যায়
চোখের নির্যাস।
বিড়্ম্বনার বৃত্তকে আঁকড়ে ধরে
কতো জল গড়ায় গুপ্ত ভান্ডারের দেশে।
আলোময় ঘরে কেনো
আঁধারের দ্বার
মিছেই বাক্স ভরেছি মনি মুক্তা হারে।
অগ্নি নিঃশ্বাস ষড়ঋতুর মতো,
কতো ছলছাতুরী,
আমার ঘরে বসে
আমাকেই কৃপা করে ভালো বাসে।
পানাহার চলে সব বন্ধু বিভুর আদেশে,
আমি যেন মুসাফির
এই ব্যাস্ত পরবাসে।
ওপাশে চোখে ফুরিয়ে যায়,
সমূদ্রসম ভাবনা তন্দ্রাচ্ছন্ন করে,
ক্ষীণ স্বরে প্রশ্ন করে কেউ
কোথায় মিশেছে সেই পথ,
ফিরবো কি রাতে নাকি সূর্য সেখানে।
অলংকরণঃ নাজিব তারেক

--------------------------
















Sovereignty, Thy Name Bangabandhu ][ Fatema Zohra Haque
Here I send you my poem
O father of the nation!
Scattered thoughts n overwhelming emotion
Like a cage crowded with birds.
The blue space, the infinity around constellation
Through which flocked my verses
Now
Weeping and bleeding inside!
Alas! The poems which were for your poetic ears,
Are now full with sigh and cry.
My grief-stricken verses
Want to get the finest tune of your voice
Which was so bold that whole nation
Could take strength from
O poet of the poets!
Your unhesitant enunciation nicest modulation of voice
Every word uttered by you
Worked as a magical wand!
Your name rouses the hearts of millions
It echoes in the hills, mountains and woods,
Chanted in the music of Padma, Meghna and Jamuna.
O leader of the Nation!
You united, Strengthened, enthused, inspired
My for fathers.
You assembled the hearts of all people
Into the harmony of one life
Eternal charioteer, you drove man’s history
Along the road rugged with rises and fall of nations,
Amidst the tribulations and terror
When the long dreary night was dense and gloom
And the country lay still in a stupor,
Your fatherly arm held her.
O father of the nation!
          Let my poem speak for you as our pride;
Our tear shaded with ancient sadness
In your mercy wipes out all dark stains.
The night dawns, in sun shines in the east
The birds sing in the morning breeze
 Brings
A stir of new life.
Touched by the golden rays of your love and forgiveness
Bangla wakes up and march forward
You, father of the nation
You dispenser of Bangla’s destiny!

August 15, 2014

---------------------------------------------------------------------------------------------------------


শামসেত তাবরেজীর কবিতা বাইশে শ্রাবণ



[সেদিন ২২ শে শ্রাবণ আমাদের চ্যানেলগুলো শাহজাহান খানের  'লঞ্চ ডুবি' চেয়ে রবি ঠাকুরের 'নৌকা ডুবি' নিয়ে ব্যস্ত ছিলো  যে লঞ্চ আজো উদ্ধার হয়নিএই নিয়ে শামসেত তাবরেজীর একটি কবিতা- "বাইশে শ্রাবণ"।]

কি কেলেঙ্কারি শাঙন ফজরকালে- 
মিছিলে দাঁড়াল টিপসুন্দরী দল,
প্রগতিপালক খেপেছে রে আজ সস্তার দিশি মালে,

ওদের গাইতে বল্।

না নামুক মেঘ, তাতে কি হয়েছে, রয়েছে ক্যালেন্ডার!

ডুবুক না লঞ্চ আরও গোটা-দুই উত্তাল পদ্মায়-
মাছের খাদ্য জরুরত এইবেলা,
বকেয়া বেতন চাইতে এসেছে, শালারা কি মদ খায়!

ওদের আজকে কুত্তা দিয়েই গেলা।

এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুনের বড় বাড়!


----------------------------





মৌসমী রহমানের কবিতা 
কালোট্রেন

একটু একটু করে কালো ট্রেন
ছুটে যায় অবিচল বিপরীত দিকে।
তুষারে ঢাকা পরে সব
চেনা পথ, মুছে যায়
অভিজাত স্পর্শের দাগ।
আনত, তুষার রোদ্দুরের
অমলিন ভাব দেখি,
পেছনে ফিরে চাই
আমাদের অনুভূতিগুলো
সেখানে নেই।
কাঠবিড়ালি আনমনে বসে
নাশপাতির গন্ধ শুঁকে
আমি দেখি আস্তিনে পরে আছে 
অপরাজিতার পাপড়ি।

=====================================
ফারহান ইশরাকের গুচ্ছ কবিতা

আয়না ফ্যাক্টরি  
চলো যাই আয়না ফ্যাক্টরি অবসরে
ঘুরে আসি। লক-করা সোনার ফটক
নীরবতা দিচ্ছে পাহারা। চোখ বুঁজলে
বিজলি খুলে যায়। দ্যাখো, ফ্রেম-করা
ফলিত আকাশ। চাঁদ-তারা-গ্রহের
চলন। কাচ ফলকে আলোর ছলনা
ছিনালের চমকানি।
তাজা বাঁশের নিচে লাশ ঘুম শুরু
কফিন। আব্রুর বিনীত মহিমা। হাসির
ঝুমঝুমি থামলো তার শেষ ব্যঞ্জনা!
চোখ মুড়তে ছাট-কাফন কপালে
বাঁধলাম। আয়না ফাটিয়ে পালানো
মুখচ্ছবি যাতে ফোটে। পারদের পাল্টা
দীর্ঘশ্বাস। আনুষঙ্গিক লবণচারিতা
হাতটিসুতে আলতো মুছলাম। মাছিপর্ষদ
পলকেই তার অকৃত্রিম জলসা জমালো
প্রতিফলনের ফুলকিগুচ্ছ মুহূর্তে মৌলিক।
বিকিরণ কুলাতে না পেরে স্মৃতিকারখানা
ঘাই মেরে উল্টে ফেললাম। আয়না চত্বর
ভরে উঠলো কান্নাতুর কাচের চমকে।

ফাস্র্টক্লাস

দিতে পারি, উরুচমচম না চুষলে পাবে না!
অধ্যাপক ছলনাচতুর। মুখ ফুটে মনের অঙ্কুর
ফোটানোর পেলব ভঙ্গি কেতাবের বালামে থাকে না।

অস্ত্রের আলাপ ছাড়া মেশিনের আভোগ-সঞ্চারী
সস্তা দামে ভোগের আশা কে করতে পারে?
মেঘচুয়ানির চারুখেলা জমে উঠলেই কাদার 
কলঙ্ক নিয়ে গোয়ারেরা

এতো গুঞ্জন করে! প্রথামতো বুঝতে না পেরে
নুনখাওয়া গুরুর জবানে আড়ষ্টতা লেগে থাকে।

পাত্র ভরা অক্লান্ত বিদ্যার ভাঁড়ামী। কোরকের
হিটমেশিন ফুড়ে আসে প্রতিভার চরম পুলক।





মুটের মদির

বোঝা ভারী হতে থাকলে ঘাড় ঝেরে ফেলে দিতে হয়
নাকি লক্ষ্যস্থলে পা-রাখার বাসনাই চাড়া দিয়ে ওঠে।
ভাবতে ভাবেত শাদা আলো কালো কুসুমের রন্ধ্রকোষে
পুঁজভাণ্ডার গড়ে তোলে। হার্টের ‍পিজকিরি এতো জোরে
পাম্প করেও কিনারা পাচ্ছি না। এতো ভার, প্রতিভার চেয়ে
ভারি! ভাঙা জানালার কাঁচে মাছি। শেষ চুমুকের কথা
ভেবে ডানা তুলে আবারও উড়লো। পাঁচশো প্রপেলার
ছিঁড়ে গেছে ঘাড় থেকে। বেঁচে আছি, মুটের মদিরা বয়ে

বায়ান্ন গলির শেষে ঝুটা মাল নামাতে পারবো তো!

-------------------------------------

গাজায় অমানবিক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে 
শাহীনা কবিরের ঘৃণাগুচ্ছ

ধীক বিশ্বমানবতা
হে কুম্ভকর্ণ বিশ্বমানবতা
আর কতো রক্ত ঝরলে তোমারঘুম ভাঙ্গবে?
তুমি শুনবে গাযায় শিশুর আর্তনাদ,
চোখ মেলে দেখবে বিশাল লাশের মিছিল,
যোগ দেবে তথাকথিত দূর্বল স্বরণ সভায়।


হে সার্বজনিন বিশ্ব বন্ধু চন্দ্র মানব
তোমার সদাহাস্য মুখে কবে গ্রহণ লাগবে?
তুমি অনুভব করবে অন্ধকার কতোটা প্রকট,
ভুমির অতলে ঘুমিয়ে থাকা মানুষের কাছে,
কতোটা ভারি একেকটি লাশ পিতার কাঁধে।

হে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সঙ্ঘ
তুমি কবে বুঝবে মানব আর কীটের পার্থক্য?
কীট বাঁচাতে উড়াল জাহাজে উড়ে বেড়াও বিশ্বময়,
শিশুদের জীবন বাঁচাতে একটি শব্দও নেই মুখে,
ধীক তোমার অধীকার রক্ষার আন্দোলনকে।
২৪/৭/১৪



প্রকৃতি তুমি নীরব কেনো
?

প্রকৃতি তুমি এখনো নীরব রবে?
যখন গাযার শিশুরা মায়ের বুকের উষ্ণতা ছেড়ে
পরম নিশ্চিন্তে ধরনীর বুকে আশ্রয় নেয়।

প্রকৃতি তোমার কিছুই করার নেই?
যখন মানব শিশুর জন্ম রোধ করতে উদ্ধত
বন্দুকের নল,নিভিয়ে দিচ্ছে নারীর জীবন।

প্রকৃতি তুমি কি তবে শুধুই দর্শক?
তোমার ভুমী,জল সব ধ্বংস করছে দানব
তুমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছ যজ্ঞ লীলা।

প্রকৃতি তুমি কি একবারও ভাবলেনা?
তুমি ভেবে দেখ,তুমিতো বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা,
দানব থামিয়ে দিচ্ছে বীরের রক্ত প্রবাহ!


তুমি তবে কি করে ঊষর থেকে মুক্ত হবে?
শ্বাপদ বার বার হত্যা করছে নারী ও শিশু
তোমার বুকে যে আর বীরের জন্ম হবেনা।।
১৮/৭/১৪


====================
শিমুল সালাহ্উদ্দিনের গুচ্ছ কবিতা

বাঙ্ময় অবয়ব
আমাকে জড়িয়ে রাখে মৃতের নিঃশ্বাস, তোমার জীবন্ত হেমরঙা লাশ আর আশপাশে, যারা যারা জড়িয়ে রেখেছে, কিংবা ছিলো কোনকালে কেনো যে তারাই হাঁটছে আলোতে দীপ্যমান! ভ্রম ভাবনার দীর্ঘ ওপারে তাঁরা, আঁধারে আড়ালে খেলে তাস অথচ অন্ধকারের আগে শেষ কালো মেঘে দেখেছি তৃষ্ণা মেঘসংকেত

অমীমাংসিত সে অন্বেষণে পৃথিবীর করুণা কৃপা চায় জন্মান্ধ দুচোখ; প্রস্তরভাঙা সবুজ কালো তর্ক মদিরা ছাপিয়ে, ছাপিয়ে স্টেশনের চা-ঘ্রাণ নিয়তিকে বলে যায় বহুদূর সমুদ্রপাড়ের হাওয়া, ‘বলো আছি হে অশোকনিজস্ব ক্যানভাসে দ্যাখো আপন অস্তিত্ব আঁকে মাটিপৃথিবীর উজান ভাটির টান’...

যেই দেশে যে শহরে ফেরারী আসামী আমি, সেই দেশে মৃতের নিঃশ্বাস ছাড়া, শীতমাত্রঋতুছাড়া, তোমার হেমবর্ণ লাশ সালঙ্কারা শীৎকার, প্রসববেদনা ছাড়া, জেনো আর কোন বাস্তবতা exist করে না...


বিস্ময়
যখন দক্ষিণমুখে যায় আমার একার নদী, স্রোত বহমানতা তুমি তখন দুডানায় ভর করে উড়াল দিয়েছো উত্তরদিকের আকাশে অন্ধকারে ভেতরে অনেক ভাঙচুরের বিবরণ নিয়ে জ্যোৎস্নার ম্লান আলোয় কদম গাছের আড়াল থেকে যে চাঁদ ওঠে আমার ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে কিন্তু লজ্জ্বা লানতের অবশ-শরীর নিয়ে, বুকে শোণিতে অনেক খামচির দাগ নিয়ে ভিজে ওঠা -দেশ নিয়ে, এক অস্তিত্বভর্তি স্থবিরতা নিয়ে, আলুথালু ঠ্যাঙ পিচ্ছিলতা নিয়ে, কেবলি গোলাপবাগানের নিস্তব্ধতা আদরের কথা মনে পড়ে...

নদীর জল তখন স্থির, শান্ত দিগ্বলয়ে হস্তীযুথের মতো চলে যাচ্ছে মেঘখণ্ড দূর কাশবনে বাতাসের লীলা...

আমি যে বাঁচবো না, এমন ধারণা অনেকেরই ছিলো


শীতে, সুপর্ণাকে
(ভাস্কর চক্রবর্তীকে)

শীতকাল এসেছে সুপর্ণা, বুকের ভেতরে এসো
চিরউষ্ণতা ছদ্ম-অমরতাসহ অপেক্ষাতুর হৃদয়
পেশল আবরণদেহে সে ঝেটিয়ে তাড়াবে যাবতীয় মরা ঘাসও
মায়াখনিজের লোভে সরে যাবে ঠিক ঠাণ্ডা যত অসময়
                        তুমি একা চুপে, বুকের ভেতরে এসো...

জোর করে ঢুকিয়ে দেয়া ব্যাঙের রক্ত নয়,
                        সুপর্ণা এখন দেহে জাগরপ্রতিভার জলকেলি
মানুষের মানবিক রক্তমাংসশ্বাসে এই আহ্বান
জানি পলকেই তাকিয়ে বুঝেছো হাজারজীবনের চোরাচোখ ইশারা বুলি
বালুঘড়িদের যত ইতিহাস রবে না এমনকি ধুলিপরিমাণ
                                    উড্ডীন ঢেউ হয়ে,সাড়া দিলে তুমি
শীতের পেলব অন্ধকারে, উৎকর্ণ রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে
সমস্ত জগৎ মহাকাল, শীতমাত্ররাত, ঘুমহারা বোকা আমাদের সাথে জেগে রবে
সুপর্ণা তুমি একা আমি, শীত ভাস্করের স্মৃতি লুটে ছিনিয়ে
দুজনে করবো শুরু একটা মরণ শীতের ভোর দেহিপদপল্লবমুদাররমে
                        শীতকাল এসেছে সুপর্ণা, লেপের তলায় মরণ ওম ...

কবির পৃথিবী জুড়ে শীতকাল এসেছে সুপর্ণা
                        লেপের আদর ওমে মায়াখনিজ তুলে আনবার দিন

এসো সুপর্ণা, তোমার জন্য অপেক্ষা করছে উষ্ণ কাঁথার কবর...


বসন্তকে...
কলাই রাইশর্ষের ক্ষেত মাড়িয়ে, মাড়িয়ে শীতের ধূসরতা আসছে হিমহাওয়ারা...সকালের সোনারোদ আদরঝলকে পলকেই মুছে দিচ্ছে মটর গমের ডগার শত্রুশিশির মহাকাল এক স্নিগ্ধ ভোরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কর্কশ দুপুরের দিকে...

ঋতুরাজ, তুমি অনিমিখে কোথায় তাকিয়ে আছো?


অন্ধবিচারের দেশে
সকলে এখন জানে এদেশে সমূহ বিষ
বয়ে যায় সরল মনের মতো
সকলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শোণিতনদীতে
                      ভিতরকণিকাবিষ
এভাবে বিকেল হলে
তারপর
অজানিতে একদিন
সহসা ঝড়ের স্মৃতি, আঁজলা উছলে রক্ত
রক্তের ভেতরে ছোবড়া  ছোবড়া
নেতিয়ে পড়া ফ্যাকাশে মুখ
           বুক ভেসে যাওয়া
ঘষাটে সীসার মতো সন্ধ্যার আকাশে
মায়ের চোখের মতো
একটা তারার ফুটে ওঠা



আনন্দবসন্তসমাগমে

শীতকুমার চলে গেলে বসন্তেরও নীমিল নয়ন,ঘুম পায় না আর মাটির গহন গভীরে কোথায় লুকানো ঠাণ্ডা নির্মল বিষহীন জল তার নিরাকার অস্তিত্বপিস্টনবলের সঙ্গতে হলুদ আলোর প্রাতঃকালীন উঁকি জাগিয়ে তোলে কলাপাতাসবুজ কচিচারাপাতার দল,যারা উদ্বাহু গেয়ে ওঠে আকাশের দিকে চেয়ে পুষ্পময় দিগন্তের গান

সুরমুহূর্তের শেষ রূপকথা হয়ে পরস্পরের দুই হাত ধরে নেচে ওঠে রাধাবাসন্তী,কৃষ্ণবসন্ত...জোড়বেঁধে ধীর পায়ে হেঁটে যায় লালকাঁচুলী হলুদশাড়ীর সর্বকালের অপেক্ষাতুর সবপ্রেমিকের সোনারহরিনী... অথচ প্রকাশ কেন আড়ালে লুকিয়ে থাকে বসন্তকুহুরা জানে,জানে প্রেমিক মানেই পুরুষ,কবি মায়ামাছ মনের গহনে তার নিত্যমুহূর্ত বসন্তেরই যাওয়া আসাসহসা শীতের গীত কৃষ্ণবসন্তের কানে কানে বলে যায় 'অবোধের যৌবন কত যে ভয়াবহ!'

ষোলকলাবতী রাধাবাসন্তী কি বুঝতে পারে যৌনদৃশ্যমালার ঠারেঠারে কৃষ্ণহৃদয় কত অসহায়... হঠাৎ রাধার চোখের যুগলকৃষ্ণমণিতে সিনেমার দৃশ্যশীতের শীর্ণকালোনদী জ্যোৎস্নার ভিতর দিয়ে বয়ে চলেছে,ম্রীয়মান অথচ শুভ্র সে হাসি,বাসন্তীগন্ধমাখা অথচ শীতের দীর্ঘ কাঁপনযাপনে অভ্যস্ত,ধ্বস্তশীত যেনো মোটা এক কাছি নিয়ে 'যেতে নাহি দিব'বলে রেখেছে টেনে তারে...

বিদীর্ণ, বিবর্ণ অথচ কী এক শুচিতা ঘিরে আছে মুখে, মনে হয় সে তার নিষ্পাপ যৌবন থেকে কুঁড়িয়ে এনেছে অবয়বে এই স্নিগ্ধতা, যেনো তাঁর মৌন সে যৌনতা হরিণীর মতো জ্যোৎস্নার শিশিরে চমকে চমকে ওঠে...যেনো সে এক খাঁড়িযুদ্ধের পাখি,অথচ ঋতুরাজ মধুময় পাখির কাকলীতে বলে চলেছে,
আমার রানীই সবচেয়ে সুন্দর’, আর শীত উপেক্ষা করে মুহূর্তের শেষ রূপকথা হয়ে পরস্পরের দুই হাত ধরে নেচে উঠছে রাধাবসন্ত,কৃষ্ণবাসন্তী...


মন্দ-স্বাভাবিক
I have made a footprint, a sacred one.
I have made a footprint; I live in the light of day.
(From an anonymous African poetry)

অলিগলি মুছে-চলা পুছে-চলা -শহরে হাতে হাত রাখা হলো দায়
তাই আজকাল বেশি আর হাঁটাহাঁটি করি না রাস্তায়

কে জানে কোথায় কিসে, পরি-হীন কল্পনা-ইঁট খসে খসে,
পণ্ড হয় গণ্ডগাঁর মেধাবী পোলার নিপাট সুষমা
হায়! বেচারা বেভুলে যদি, সারহীন ট্রাফিক জ্যাম-ঠাঁসে
রসক্ষরে নষ্ট করে জায়মান, আলোকবিলোলা গান, ভয়-নাগপাশে বশ্যতা আশে!

সতত সতর্ক তাই থাকি ইদানিং কেননা এখন,
নামলেই রাজপথে, বড্ড উসকায় লোকে, নাশিলা ছোবল হানে কানে
কানের পর্দায় ঝিল্লিতে সেই ফিসফিসে উড়ো মন্ত্র, সেই কানাকানি

সুযোগসন্ধানী হও বাবা সুযোগসন্ধানী
সুযোগসন্ধানী হও সোনা, সুযোগসন্ধানী
সুযোগসন্ধানী হও ওগো সুযোগসন্ধানী

এইসব ত্রিমাত্রা ডায়ালগ শুনে, ভাবি শেষমেষ, ঠিক
চরাচরে টা আর অকপট নষ্ট ছেলে, জনই-বা মন্দ-স্বাভাবিক

========================
সৈয়দ রুম্মানের গুচ্ছকবিতা


শামুক ভাঙার দিন

বকুল ভোরের দিন ফুরিয়ে অস্তরবির রাগ;
ধূলির স্থলে কাদা এখন পথ করেছে রোধ,
স্মরণ ডাকে তড়িৎ বেগে, মিথ্যে প্রবঞ্চনা
নিত্য জোটে এই খেয়ালি মনের মাঝে এসে;
বাঁচার মতো বাঁচতে চাওয়া ভীষণ অপরাধ।

কেউ কথা দেয়, মোচড় মেরে ভাঙছে কোমল হাড়
বিবমিষায় বিতৃষ্ণা চোখের 'পরে জাগে;
হাত নাড়ালে কেউ চলে যায়- ছ্যাচড়া গালি দিয়ে
কোন সে চোখে আকাশ দেখি মেঘের আছে ভয়
দগ্ধ হতে কে আর মাখায় অমৃত অন্বয়!

ছিন্ন পালের হওয়ায় গুনি শামুক ভাঙার দিন
সূর্য শেষে আসুক না চাঁদ, সময় অর্বাচীন!



স্মৃতিতে বিপ্লব

বিচ্ছিন্ন আমাকে দিলে ঈর্ষার করাত!

গেছো বলে দুঃখ নয়, পাতাবাহারের মাঝে প্রতিদিন সূর্য দেখা হয়।

ইদানিং তোমাদের গলিতে জঞ্জাল;
আগাছা উপড়ে নিতে টেনে ধরো এ কোন কঙ্কালে!

পেরোনো বিকেল থেকে ফিরিয়েছি মুখ;
ঘুরে দাঁড়ালেই হবে স্মৃতিতে বিপ্লব!

 











ওরে পূর্ণিমা, এবার আয় তুই আয়


তোমার হতো বাবুই সংসার! বাকাট্টা ঘুড্ডি হলেও সে সময় বর্ণিল থাকে ক্যানভাসে, মেঘে! এবার চাইছি বরদূরবর্তী বৃষ্টিবিদ্যুতে। জেগে ওঠো আমার নদী, এঁটো ঘাস, বিবাগী শামুক। আমাদের বৌচি-গোলাপপদ্ম ধীর ইউকেলিপ্টাসে হাসিমুখ বিকেল দেখায়...নিষ্ঠুর উজানেব্যর্থ প্রত্যুত্তরে সময়ের বিদ্যাপিঠে বৈড়ালব্রত!

ওরে পূর্ণিমা, এবার আয় তুই আয়
আমার দিদির চোখে কেনো কালবৈশাখী ঠোকরায়...!

============
শেখর দেবের গুচ্ছ কবিতা



















রাতুল প্রহর

বিনিদ্র রজনী আঁকে কামক্লান্ত চোখ
নিখুঁত কালো জমে উজ্জ্বল শিরায়
তারা যদি খসে যায় আপাত নিয়মে
আঁধারে খেলা করে অনন্ত অভিমান।

উড়ে গেছে যে ডাহুক ঝোপের আড়ালে
তার তরে কেবা গায় বিলাপের সুর
জল আছে হাওয়া নাচে হৃদয় ফুলে
খোঁজ করো যতো পারো নতুন আবেগ।

ভোরগুলো তাজা প্রাণে হউক অম্লান
ঝলমল রোদ ওঠে হীরক আমোদ
পেছনের সুর ভুলে সমুখ সমর
তলোয়ার গুনে শুধু রাতুল প্রহর! 



সত্যের আয়না
কিছুকাল পরে
বিষাদের বিষ পানে নীলকন্ঠ সারস
ডুবে যায় যাপনের বাহারি দর্শনে।

চোখের জলে বৃষ্টির তামাশা দেখে
ভাসে অর্থহীন আকাশ
অথচ দেখো-  কতোটা উদার পৃথিবী।

যে সারস উড়ে গেছে কালের হাওয়ায়
তার তরে ভারাক্রান্ত নিঃশ্বাস
নিমেষে মিশে যায় সত্যের আয়নায়।

কঠিন বেদনা হতে জাগে
বাহারি ফুল আর সুদৃশ্য প্রজাপতি।

অনন্ত অসীম জ্ঞান করে নাকো শোক
সময়ের আয়নায় চলে বিশ্বলোক।


===========
নূরুল হকের তিনটি কবিতা
















এবং সময়হীন  
তোমার জীবনটাই যেন একটি ধ্যান
পদ্মাসনে স্থাপিত এক নিঝুম ভঙ্গি,
দূরান্তরের কোনো ঝরাপাতা
        একাকী জেগে আছো                                
কোনো অচেনা খেলায়,
যেন ছায়া দিয়ে 
             ভরা বাতাস দিয়ে
আলোয় প্রকাশ করতে চাচ্ছো
         আগামীর কোনো আভাসকে
যা
রূপকথার পবিত্রতায় ঝিরঝিরে
এবং সময়হীন।     



শূন্যতার শুকনো পাতা

এতদিন ভাবতাম 
            কবিতাই ঈশ্বর 
কিন্তু এখন দেখি 
           কতিগুলি শব্দের উপর দিয়ে কেবল 
                      ভেসে এসেছি সারা পথ।
শুন্যতার শুকনো পাতা
                উড়িয়ে হারাই
অস্তিত্বের ভাঙচুর পারে পারে।



আলাপন

চারদিকে সময় ধ্বংস হচ্ছে নির্বিচারে
আমি দূর-পাল্লার অনুভবে আলাপন করি
                         সময়ের সাথে
                         ধীর লয়ে,
'কার স্তনের নীচে ছায়া পড়েছে
                         ঐ নির্ঘুম গ্রহলোকে?'
কোনো প্রতি-আলাপ পাই না। 

============
মাহবুব হাসানের কবিতা
একটা মন ঢুকে যায় আরেক মনের গহনে

একদিন সন্ধ্যার আগে দেখেছিলাম একটি মেয়ে
বসে আছে একটি ছেলের কোলে, কনারকের কোনো এক শয্যায়
আর একদিন রেসকোর্সের নামের ওপরে বসে থাকতে দেখলাম সোহরাওয়ার্দিকে
জুয়ার মাঠে রাজনীতিকের এই যুগল-আসন
পুরানো অভ্যাসের হয়ে ঝুলে আছে আমাদের সংসারে।
একটি শব্দের ভেতরে আরেকটি শব্দকে গিলে খেতে দেখেছি আমি,
নারীপুরুষের প্রেমও সঙ্গমের ভঙিমায় দেখা গেছে বহুকাল,
কিন্তু একটি রাজনৈতিক চরিত্র আরেক রাজনৈতিক চরিত্রের ভেতরে সেঁধোয় কেমনে?
তাই দেখা গেলো।
ঠিক বিপরীত লিঙ্গের মতো এক নারী আরেক নারীর
ভেতরে ঢুকে গেলো যেনো তারা কোনো বস্তু-বাস্তবের কেউ নয়,
পরবাস্তর,
বলা যায় জাদু এ আমাদের রাজনৈতিক জনজীবনের।
এই আছে এই নেই... কতো যে মধুর খেলা!
সারাবেলা,
এই খেলা তো প্রকৃতির অন্দর মহলে ঝুলে আছে...

আমি কৈ-টোরার মতো ফাল মেরে ধরি সেই সব জানা-অজানা
মিশ্রস্বভাব মানুষের ভাবনারাজি। কবিরাজি করি তাই নিয়ে!

একটি রাজনৈতিক চরিত্র আরেক রাজনৈতিক চরিত্রের মধ্যে মিশে গেলে
দেশটি হয়ে যায় বাংলাদেশ।

০৭/০৮ জুলাই ২০১৪
পমোনা সিটি, এলএ, যুক্তরাষ্ট্র

-----------------------

আবু মকসুদের গুচ্ছ কবিতা

যোগ্যতার কাঙ্ক্ষিত খতিয়ান
ধূলিশূন্য রাস্তায় উড়ে যাওয়া ধূলি দেখে
বাতাসের ঘনত্ব নির্ণীত হতে পারে
রুটির উপর বাটারের পুরুত্ব নির্ণয় করতে
পারে ক্ষুধার প্রয়োজনীয়তা
নিছক তামাশায় যারা জীবন কাটায়
মানুষের দৌড়ের খবর অজানাই থেকে যায়
দুর্মূল্যের বাজারে কুমিরের গাঁটে
মাছের গন্ধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক
আড়তদারের ঘরে অসুখে কেউ কাৎরাবে না
ভাবলে বিশ্বাস শিথিল হয়, শরীর বিক্রির শ্রমে
দৈনন্দিনতা পাড়ি দেয়া যায় না জেনেও দলিত
সমাজে বাড়ে না রুমালের ব্যবহার, অভ্যস্ততা
থেকে মুক্তির প্রচেষ্টা প্রাগৈতিহাসিক কালে হতো
একাল- নর্দমার নালায়ও পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত তৃপ্তি
গোবরে  যারা উর্বরতা খুঁজে তারা নিছক গোবরবাজ
মানুষের পল্লিতে হাঁটার কোন যোগ্যতা তাদের নেই




..................
নিঃশ্বাসের শব্দ

নিম্নে ধাবমান চোখ উপরে তাকালে
সিঁড়ির মাথায় কারো ছায়া পড়ে
তাই গতকালের বিছানা বেশ ভারী ছিল

আজকের বিছানা বেশ মসৃণ
বালিশগুলোও তুলতুলে
কিন্তু ভারীত্বই উপভোগ্য ছিল মনে হচ্ছে

আমি ছুঁতে চাই তোমার চিবুক
বিছানার দিগন্তে আমার আঙ্গুলগুলো
তোমায় খুঁজবে ভেবে পুলকিত মন

নিঃশ্বাসের শব্দ প্রতিধ্বনিত হবে
আমার শরীরে, কক্ষের পর্দায়
আত্মা লিখবে জলের কথা

আমি ডাকছি তোমাতে পৌঁছবো বলে
কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সব কাঙ্ক্ষাই অপঠিত চিঠির মত
ময়লা ঝুড়ির শোভা বর্ধন করছে ক্রমশ...


.....................
চন্দ্রাভিযানের  আগে

রাতের চন্দ্রাভিযানে আত্মশপথের পথ উন্মুক্ত
হবে, ভেবে শহরতলির রাস্তা
পায়ের দাগ রাখার আমন্ত্রণ জানায়
রাস্তার দুপাশে সারি সারি দরজায় নরক রয়েছে
জেনে গেলে ঘুমপাড়ানি মাসির আহ্বান
উপেক্ষার হেতু খুঁজতে গলধঘর্ম হতে হয় না
মাসিকে দীর্ঘ নদী পাড়ির কিচ্ছা শুনালে

তার স্মৃতিতে ভিড় করে নির্বাসনের কাল
স্বেচ্ছায় এ কর্মে নিয়োজিত নয় জেনে
আমরাও বিগলিত হই, বিনাশী সময়ের
অভিশাপ আমাদের ছুঁবে না প্রতিজ্ঞায়
ঘড়ির আবর্তন থামিয়ে পড়ে নেই নদীকথা

একটা চালাঘরের লাগোয়া বারান্দার
এককোণে পিঁড়ি পেতে উনুন চড়ানোর খোয়াব
উঁকি দিলে মন যায় ফল বিক্রেতার বাড়ি

রাতের চন্দ্রাভিযান শেষে শহুরে মানুষেরা
নিজস্ব অলিন্দে ফিরতে শুরু করলে
দূরের লাউডস্পিকারে বাজতে থাকে... হাওয়াম্যা উড়তে যায়ে...


=============
শিমুল আজাদের গুচ্ছ কবিতা

এই আধুনিক নামসর্বস্ব বিশ্বে
............
যদি পৃথিবী আজ উন্মুক্ত থাক তো
তবে আমি নিশ্চিত এই বন্দিত্বকে ছুঁড়ে ফেলতাম,
গুড়িয়ে দিতাম এই ক্ষুদ্রতার পরাকাষ্টকে।

আমার প্রাণের বীণা বেদনায় অবস হয়ে পড়ে
আমার সত্ত্বায় কালবৈশেখির ঝড়
অহর্নিশ লণ্ড-ভণ্ড করে,
নিশ্চিহ্ন করে দেয় যাবতীয় ঐশ্বর্য।
আমি কী করব!
কী আর পারি -এই আধুনিক নামসর্বস্ব বিশ্বে!

আমার পায়ে দশ-দশটি ঘোড়ার শক্তি
বাহুতে হিমালয়ের প্রতাপ।
আমার চোখ জুড়ে অনন্ত তৃষ্ণা;
তারা সব একত্রে তুলেছে কোরাস দিবা -রাতি।
আমি এদেরকে আর কতটা সামলাবো!

যদি না সীমান্ত উন্মুক্ত হয়,
যদি অর্থ ও প্রাচুর্যভাবনা ফিঁকে হয়ে না আসে-
কীভাবে আমি মুক্তির গান শোনাব জনে জনে?
মানুষে মানুষে প্রেম কী করে জাগাবো?

যদি পৃথিবী আজ উন্মুক্ত হয়ে যেত!

২৪ জুন ২০১৪ বরিশাল

 এই জনপদে
...........................
আমি বরফ দেশের লোক
ভাগ্যচক্রে আমার পূর্বপুরুষ এইখানে ডেরা বেধেছিল,
এইভূমে শস্যের বীজে চুমু খেয়েছিল,
নদীতে সাঁতার দিয়ে মৎস্য শিকার করেছিল,
ধূলিকণাকে খাঁটি সোনা জেনে হেসেছিল অট্টহাস্যে,
বৃক্ষের ডালে ডালে পাতায় পাতায় মিশে-
আকাশে হাত বাড়িয়ে পাখি হতে চেয়েছিল,
ফুলের রঙিন রং বুকে মেখেছিল;
নানা ফলে মুখ রেখে শরীরে ঐশ্বর্য গড়েছিল।

তারপর কেটে গেছে হাজার বছর;-এই রক্তস্রোতে
প্রেম ও বিরহের উত্তাপে, পুড়েছিল তাদেরই কেউ,
সৌন্দর্য তৃষ্ণায় আর কর্মের স্রোতে একনিষ্ট সত্ত্বারা
বড় বেশী জীবিনবাদী ছিল।
তারা বুকে গড়েছিল শিল্পের সাহস।
অভাবকে স্বভাব নয়, ঐশ্বর্যে রাঙিয়ে

তারা ফেরী করেছিল বেদনার অসংখ্য নীল পসরা।

আজও এই জনপদে আমি হাঁটি
ফেরী করি বেদনার অনন্ত সব পাখি।

২৪ জুন ২০১৪, বরিশাল


আমি আছি মিশে
....................................

দীর্ঘদিন আছি, গ্রীষ্ম বর্ষায় শীতে
আছি জীবন অনুভবে, মানুষের গড়া সংসারে;
সৃষ্টিকর্তার নানা উপহারে!

আছি দ্বন্দ্বে ও দ্বৈরথে
খেজুর ছায়াতলে, বটবৃক্ষের নীচে-
তামাক আর আগুনের সংস্পর্শে।

আছি রাজপথে, গ্রামীণ সৌকর্যে-
জনপদে রঙিন চরিত্রে;
ধান্দাময় জীবনের পীঠে; পার করছি বনাঞ্চল-
হরিণ হৃদয়, সিংঘের তর্জন-গর্জনে।

গৃহের আসবাবে, ইঁদুর ছুট তেলাপোকার সমাবেশে
টিকটিকি মাকড়শা ও মশার উৎপাতে।
আছি মিশে জাগরণে, নিদ্রাযাপনে;
সাংসারিক বোঝাপরায়; সন্তানের স্পর্শ সুখে-
কল-কাকলিতে।
আমি আছি মিশে, প্রাত্যহিক।

২৩ জুন ২০১৪, বরিশাল


---------------
মাহবুবা ফারুকের কবিতা যাবো

কাকের চোখের মত
বৃষ্টির জলের মত
একটু মন আছে আশার পাত্রে
বিশ্বাসের কাছে দীক্ষা নিয়েছি সমর্পণে যাত্রা
ক্ষনেকের ভাললাগাও নিজস্ব সুখ
সময়ের সুতোয় গাঁথা সম্মতির গল্প
বাঁশি কি বাজে ঠোঁট না ছুঁয়ালে?
মেঘ উড়ে যেতে পারে
বৃষ্টি ঝরে যেতে পারে
মেঘে মেঘে না মিললে কি বৃষ্টি হত?
যতটুকু নিয়ে যেতে পার ততটুকু যাব।


==================
জিনাত জাহান খানের গুচ্ছ কবিতা

মগ্ন হই
.....................
অভিজ্ঞতাগুলো জমে থাকে চেতনায়
অভিন্ন আভাসের খোঁজে-
উড়ে যায় কিছু রূপালী মাছ
শূন্যে, সমুদ্রের নাভি হতে।
মানুষ রহস্যের মূল চাবিকাঠি শত্রুতা,
দেখে দেখে সঙ্গ ছেড়ে দূরে যাই
কাছাকাছি থাকা সব মানুষ থেকে।
যেন আলোকচিত্রের মতো একফোঁটা আলো,
তবু দূর-চোখে মগ্ন হই মানুষের মাঝেই...
ছায়া খুঁজি করুণা খুঁড়ে খুঁড়ে
অস্পষ্ট বুকের কত নীচে মানুষের রক্ত ছায়া!
তবু দূর-চোখে মগ্ন হই মানুষের মাঝেই...
ছায়া খুঁজি করুণা খুঁড়ে খুঁড়ে,
অস্পষ্ট বুকের কত নীচে মানুষের রক্ত ছায়া!



সন্ধি
.........
ঝরছে নরম রোদ-
জানালায় জানালায় দুলছে শালপাতার পর্দা
বেঁচে থাকা মানুষের গোপনীয়তা
জেনে ফেলে যে মৃত মানুষ,

সে এখন, ঈশ্বরের ঊরুর মাঝে
সন্ধি খুঁজে ফেরে...


অভিযোগ
...........................
শহরের বালকগুলো নুনের মড়কে দেহ রেখে
আকাশে ছুঁড়ে দেয় ঘুড়ির বাইসাইকেল।
ব্যর্থ ঘুড়ি বাতাসের মস্তিস্ক থেকে
মগজ খুলে খুলে বৃষ্টির নোলক হয়ে ঝরে
পিপাসার ঢেউ খুলে নীল ডানার পাখিরা
বেরিয়ে পড়ছে রাস্তায়।
এতসব নীল নীল পাখিরা স্বপ্ন দেখতো যাদের নিয়ে,
আজ তারাই অভিযোগ এনেছে বিশ্বাস ভঙ্গের।

যা দেখছো এ শহরে এসব হয়ে যাবে
মূল্যহীন কিংবা চতুর্থ বিষয়

কোথাও কেউ থাকে বা থাকে না,
যা আছে হয়তো ছায়ার কঙ্কাল...

উপহার
................
প্রিয় ঈশ্বর আমাকে একটি কালোগোলাপ দেবেন
দাঁড়িয়ে আছি আমি ও একটি দেবদারু গাছ
কোন মোহময়ী লতা শরীর জড়িয়ে
উঠে যাবার শর্ত দিয়েছিল কিনা গাছটিকে,
সত্যিই জানিনা

তবু আমি,
বিনিময়যোগ্যতা হারানো কোন প্রদর্শনী শেষে
সমস্ত অচল মুদ্রাগুলো কিনে রাখি
এবং ঈশ্বর থেকে প্রাপ্ত নির্বাণ উপহার,
আমাকে বিদায় বলতে মৃত্যু নয় বরং
আত্মগোপন শিখিয়েছে...


===========
ভারতের সাবেক প্রধান মন্ত্রি অটল বিহারী বাজপেয়ী
এবং বর্তমান প্রধান মন্ত্রি নরেন্দ্র মোদী কবিতা

মৌমাছি প্রস্তাবনা/ নরেন্দ্র মোদি

মাঝে মাঝে আমি মৌমাছি হয়ে যাই
শীতসকালের সূর্যেও এনে দিই বৈশাখী তাপ
মৌমাছির মতো আমি এখানে সেখানে উড়ে বেড়াই
প্রতিটি স্থানে আমি বসি, অথচ থাকি না কোথাও...।
এক মুহূর্ত ফুলের পাশে বসি। ডুবে যাই পুষ্পসৌরভে,
মুক্ত উদাসীন আমি বাতাসে দুলে দুলে খুঁজে ফিরি গোলাপ।
কখেনা কখনো আমি মৌমাছি হয়ে যাই।
যেখানে বাগান আছে, আছে সুরের ঝঙ্কার
উন্মুক্ত অরণ্যে রঙিন দৃশ্যরাজি,
জীর্ণ পথে আমি চলি না
স্বতন্ত্র আমার যাত্রা এলোমেলো বেশ।
তুমি দেখো এই উদাসীন নিঃস্ব ফকির
অথচ তার অন্তরে আমি ঐশ্বর্যের বৃক্ষ।
সময়ে সময়ে আমি মৌমাছি হয়ে যাই।

অনুবাদ: তানিম ইশতিয়াক
……..


অটল বিহারী বাজপেয়ীর কবিতা:

এক বরস বীত গয়া, এক বরস বীত গয়া
ঝুলসাতা জেঠ মাস, শরদ চাঁদনি উদাস
সিসকি ভরতে সাভন কা, অন্তর্ঘট রীত গয়া
এক বরস বীত গয়া, এক বরস বীত গয়া

সীকচোঁ মে সিমতা জাগ, কিন্তু ভিকল প্রাণ ভিহাগ
ধরতি সে আম্বর তক, গুঁজ মুক্তি গীত গয়া
এক বরস বীত গয়া, এক বরস বীত গয়া

পথ নিহারতে নয়ন, গিনতে দিন, পল, ছিন
লৌট কাভি আয়েগা, মন কা যো মীত গয়া

এক বরস বীত গয়া, এক বরস বীত গয়া।

==============


পশ্চিম বঙ্গের মমতা ব্যানার্জি মুখ্য মন্ত্রি হবার আগের মমতা আর পরের মমতার মধ্যে অনেক তফাৎ!  ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারিতে লেখা তাঁর কবিতাটি সেই প্রমাণ বহন করে। এখন মমতা তিস্তার পানি না দিলেও সেই সময় তিনি প্রধান মন্ত্রি শেখ হাসিনাকে সন্দেশ-কবিতা-শাড়ি দিয়ে বরণ করেছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশ মোদের প্রিয়/ প্রিয় বাংলা ভাষা। বলেছিলেন- দুই বাংলার সেঁতু বন্ধনের কথা। কবিতাটি পড়ুনঃ



মমতা ব্যানার্জির কবিতা 
শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধু হৃদপদ্ম চাইলেন না
প্রিয় শেখ হাসিনা
কাছে তিনি অপরূপা
নেই তার তুলনা।
কাছে তুনি অন্য অনন্যা
কখনো আপর আনমোনা
বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের
কখনো ক্ষমা করোনা।
বাঙ্গালদেশকে ভালোবাসতে
কখনো করোনা ছলনা
সীমার মাঝে অসীম তুমি
বাংলা তার প্রেরণা।
বাংলাদেশ মোদের প্রিয়
প্রিয় বাংলা ভাষা।
দুই বাংলার সেঁতু বন্ধন
সম্মতি (অস্পষ্ট) আশা।
২৯/১/০৯




===========
কচি রেজার কবিতা 
কেউ কি ভাঁজ করে দেবে বুড়িগঙ্গা



ঘষে ঘষে যেতে চাইছেনা জুতো
হ্যাঙ্গার ঝুলছে 
নামিয়ে নিচ্ছে না  কেউ
হাত রাখছে না পায়ের খবর 
তন্ন তন্ন খুলছে প্যাঁচানো নাভি
বাজছে   
দু’জনে ঢুকে যাচ্ছে দু'জনার নখে





সারাদিন আজ সেলাই ছিলনা
নব্বই শতাংশ বোতাম মানছেনা আঙুল
আমি শষ্য ঝাড়ছি শালিক উড়িয়ে
পকেটের ভঙ্গি না তাকিয়ে চলে যাবার মত
তবু সান্নিধ্য পেতেই লাস্য ঠোঁট চুমুতে আধ গোল


পুরো সাতদিন কেউ আমাকে কুচি কুচি করে
ছাড়ালো নখে, সামান্য পতনে বিশ্বস্তভাবে 
চে উঠেছে বুক
এই জ্বরে কেউ কি ভাঁজ করে দেবে বুড়িগঙ্গা?





===================










মঈন চৌধুরীর কবিতা
অক্ষম
স্তব্ধ কুয়াশার অন্তরালের জমাট মেঘ হঠাৎ জোৎস্না হয়ে গেলে, শুরু হয় ফোটন ঘটিত আঠালো বৃষ্টি, শুরু হয় চাওয়ার প্লাবন।
  
এ প্লাবন আলোর মতো, শেষ নেই 
সব ভেসে যায় বারবার প্লাবনের জলে,  
জীবন  কেন্দ্রে তৃষ্ণার শেষ দেখা ছাড়া   
কারও আর তখন কিছু করার থাকে না।
 


অতিপ্রাক্রিতিক
অতিপ্রাকৃতিক হয়ে গেছি। 
বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করি, বৃষ্টিও নামে,
ভিজে যায় পথঘাট, নষ্ট শহর,
রক্তের দাগ মুছে যায়,
কিন্তু তুমি আর আমি ভিজতে পারি না।
সত্য বলে, আমরা এখন এমন একক
চোখের জল ছাড়া আর কোন প্লাবনে ডুবি না।


এ জার্নি উইথ টাইম
জিজ্ঞেস করলাম—‘যাচ্ছি কোথায়?’
উত্তর পেলাম—‘স্টেশনে।
কোন স্টেশন?’—প্রশ্ন এবার,
উত্তর এলো—‘তাতো জানিনা।

এঞ্জিন থেকে শব্দ পেলাম
এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছি,
কোথায় যাচ্ছি জেনে লাভ কি!
৪৩ বছর ট্রেনে চড়নি?’


প্রেরণা
স্বপ্ন হয়, প্রশ্ন হয়, চিন্তা হয় আর
চেতনার মাঝে জাগে অচেনা পাহাড়
যা আছে প্রাণের কাছে, তাই হয় দূর
অচেনা চেনার মাঝে সমুদ্র প্রচুর।
কেন যে এমন হয় জানিনা এখন
একি তবে এনট্রপি, ভাঙাগড়া মন
নিয়ম সত্য ভুলে নড়বড়ে ভিত,
পরমা তৃষ্ণা তুলে অযথা গনিত?
এটা কি নিয়ম নাকি? তাই যদি হয়
তবে সত্য, ধ্রুব সত্য, যা আছে প্রনয়,
তাই হল সুপ্ত সুখ চেনা অচেনার
দূর ও কাছের টানে প্রেরণা বাঁচার।


রেললাইন
জীবনকে নিয়ে রেললাইনের মত পাশাপাশি থাকতে চেয়েছিলাম
ইচ্ছে ছিল সৃষ্টির উন্মাদনায় জড় করবো সমস্ত বিস্ময়
ইচ্ছেমত গোলাপ, চামেলি, বেলির রঙ বদলে দিয়ে
বারবার ঘুরেফিরে দেখে আসব ইতিহাস,
সমস্ত কবরখানা আর শ্মশানে গড়ে তুলবো বকুল বাগান
হৃৎপিণ্ডের কনসার্টে হবে প্রতিদিন বেদনামধুর অন্তরসঙ্গীত
খনন করবো চোখের জলের দিঘি, জলপরীদের আনন্দনিবাস,
সুখের আইলায় প্রতিদিন ভেঙে দেবো প্রতিক্ষণের শ্যাওলার সমাজ।

কিন্তু তা আর হল না, জীবন রেললাইন হয়ে চলতে চলতে
কোন এক প্রান্তবিন্দুতে গিয়ে তৈরি করলো এক অযান্ত্রিক ত্রিভুজ,
একটা লাল বাতি দেখতে পেলাম দূরে বহুদুরে
সস্যুরের দ্যোতক/দ্যোতনা বুঝে দেখলাম ওখানে লেখা—‘থামো!

ছবিঃ কবির ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে নেয়া।

================
আলতাফ হোসেনের কবিতা 
অন্য দুপুর

পাড়ার ফাংশন আর আজিমপুরের অফিস হাঁটছে একসঙ্গে
আমি তো সেই জানালায় আবার
যার অনুবাদ করেছেন পারভিন একটি বইতে
যতই ভাবি কালের ক্ষেত্রে পাস্ট টেন্স আর হয় না
তত কালো ইঞ্জিনের শেয়াল-চিৎকার
একটি টেলিফোন করার আগে নার্ভাস একজন হেঁটে চলেছে
পথে
ভায়াগ্রা-ভাবনায়

দুপুর একটি বেলুন তার মুখের বাঁধন গেছে খুলে


===============
মাইকেল মধুসুধন দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী এবং তাঁর অসাধারন দু'টি সনেট
----------------------------------------------------------
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের দিকপাল মহাকবি মাইকেল মধুসুধন দত্তের ১৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী ৩০ জুন। ১৮৭৩ সালের এই দিনে কলকাতার আলীপুর হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাইকেল পড়াশুনা করেন প্রথমে কলকাতা হিন্দু কলেজে এবং পরে ১৮৪৮ সাল থেকে পিতার অর্থ সাহায্য বন্ধ হলে মাদ্রাজ চলে যান। সেখানে ইংরেজ নারী রেবেকা ম্যাক্টাভিসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৮৫৪ সালে তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী গ্রহণ করেন। ১৮৫৬ সালে তিনি রেবেকাকে ত্যাগ করে এক ফরাসি নারী হেনরিয়েটাকে বিয়ে করে কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৮৪৯ সালে তিনি ইংরেজি কাব্য 'The Captive Ladie' রচনা করেন। ১৮৫৮ সালে রচনা করেন নাটক 'শর্মিষ্ঠা'। ১৮৬০ সালে 'একেই কি বলে সভ্যতা' 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' নামক দুটি প্রহসন লেখেন। এ সময় তিনি সর্বপ্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখেন 'তিলোত্তমা সম্ভব' কাব্য। এরপর ১৮৬১ সালে রচনা করেন তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি 'মেঘনাদবধ কাব্য'। এরপর লেখেন ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১), বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২)।
পরবাস জীবনে তাঁর দু’টি অসাধারন সনেট ‘বঙ্গভাষা’ এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ উপস্থাপন করা হলোঃ

বঙ্গভাষা
হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবিধ রতন;-
তা সবে,(অবোধ আমি) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্তকরিনু ভ্রমণ
পরদেশেভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি!
অনিদ্রায়,অনাহারে সঁপি কায়মনঃ
মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;-
কেলিনু শৈবালে,ভুলি কমল-কানন!
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্নী কয়ে দিলা পরে,-
''ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি,অঞ্জান তুই, যা রে ফিরি ঘরে।"
পালিলাম আঞ্জা সুখেপাইলাম কালে
মাতৃভাষা-রূপ খনিপূর্ণ মণিজালে।


কপোতাক্ষ নদ
সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে
দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা যত দিন যাবে
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি রূপ কর তুমি এ মিনতি গাবে
বঙ্গজ জনের কানে সখে-সখারিতে।
নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেমভাবে

লইছে যে নাম তব বঙ্গের সঙ্গীতে।

====================================













আফরোজা সোমার গুচ্ছ কবিতা

সত্য ও সহোদর
আমার খাঁচায় বাঘ, বাঘের খাঁচায় আমি,
আমরা একই উদরে জন্মেছিলাম,
আমরা একে অন্যকে খেতে চাই;

আমাদের মাপ্রকৃতিবলেছেন: এর চেয়ে আর কোনো সত্য নেই;
এক জীবন নাশ-এর মধ্যেই নিহিত থাকে আরেক জীবনের বীজ,
আমরা তাই একে অন্যকে সংহার করে চলি, বপন করে চলি বীজ;

আর মৃত সহোদরের মাথার কাছে শোকাতুর হয়ে বলি:
ক্ষমা করো ও প্রিয় বাঘ
ক্ষমা করো ও প্রিয় মানুষ
ক্ষমা করো ও প্রিয় ফুল
ক্ষমা করো ও প্রিয় ফল
ক্ষমা করো ও প্রিয় বীজ;
আমরা প্রাণধর্ম পালন করে চলেছি মাত্র।


ভালোবাসা
এমন করুণ দিনে তবু বাবুই ডেকে যায়
ঝুঁটি দুলিয়ে দুলিয়ে রোদ্রে হাঁটে লাল মোরগ
রঙিন ডালিয়া ফুলের কাছে এসে শিশু হেসে ওঠে
কোকিলের ডাকে সাড়া দিয়ে ডাকে আরেকটি কোকিল।

আমার বুকের মধ্যে ছড়াচ্ছে বিষ বন্ধুর ছোঁড়া তীর
আমার চোখ হয়ে আছে রুদ্রপলাশ
তবু এই চোখের ফুলে পাখি হয়ে এসে বসে
মায়ামুখআমি তাকে পারি না তাড়াতে?

পাখির ঠোঁটের ঘায়ে রক্তাক্ত যে ফুল
রোদের মায়ার ঘায়ে বিদ্ধ দুপুরের যে লাল মোরগ
তাকে দিও না ফুলের তোড়াচকলেটের বাক্স উপহার
হৃদয়ের শুশ্রুষা ছাড়া মানুষের হয় না বাঁচা।




বসন্তবউরি
এই অবশ দুপুরে আমার যাবার জায়গা নেই
এই বিকেল করুণ চোখে আমাকে বিদ্ধ করে রোজ
আমি আর পারছি না ধরে রাখতে আমার ভার
আর পারছি না চেপে চেপে নিঃশব্দে ফেলতে দীর্ঘশ্বাস
আর পারছি না সংসারে খুঁজে পেতে এমন কোনো কাজ যা
তার মধ্যে পিষে আমাকে নিংড়ে নিয়ে ভুলিয়ে দেবে
এই অবশ দুপুর নিজের মধ্যে বয়ে চলার ভার।

তোমার ঠোঁটে করে আমাকে মৃত্যুর সমান দূরে নিয়ে যাও
আম গাছের ডালে বসে সময়-অসময়ে ডাকতে থাকা বসন্তবউরি
তোমার স্বরে লীন হয়ে মানুষের বুকের মধ্যে আমি থাকবো মায়ায়।

বঙ্গোপসাগরের প্রতি
শত শত বাঁও জলের গহীনে
পলি জমে হাজার বছর
সাগরে জেগেছে যে দুবলার চর, তার তো জননী তুমি,
কিন্তু মা, আমার আশ্রয় কই?

সুলেমানী তরবারী হতে চাই নি কখনো
তোমার অতল তল থেকে জেগে ওঠা
নিঃশব্দ 'আলোর কোল' চর হতে চেয়েছি কেবল,
চেয়েছি বারবার সুন্দরবনে বেড়ে ওঠা
একটা বেনামী গাছ হতে, ঘুঘু হতে;

কেষ্ট নামের যে মাঝি ছেলেটা
বিজন দ্বীপে নৗকা সারাতে সারাতে
ভর দুপুরে গেয়ে ওঠে:
'হরি নামে সুর বেঁধে দাও দেহ একতারায়'
তার মতো বেভুল হতে চেয়েছি।

শাঁখারী বাজারে ব্যবসায়ীদের ভীড়ের ভেতর
গোপাল নামে যে দোকানী লোকটার গায়ে
কেমন যেনো নদী নদী গন্ধ--
তার মতো একটা খুব গোপাল হতে চেয়েছি;
প্রবল বিজয়ী হতে তো চাই নি কোনো দিন;
চেয়েছি সহাবস্থান,
চোখে চোখে প্রাণের ইশারা;

তবু কেন স্লেজ টানা কুকুর হয়ে ওঠছি
ক্ষেপে উঠছি পরস্পরের বিপরীতে?
নিজেদেরই রক্তে কেনো রাঙিয়ে তুলছি বরফ?

এখন তো ফুরোবার সময় নয়,
জীবন জীবন করে কাঙালীপনার সময় নয় জীবনের পিছু পিছু;
এখন আমরা গাছ হবো
রোদ এসে জিরোবে তার পত্র-পল্লবে
সমুদ্র হবো -- রহস্য তৈরি হবে সাগর ঘিরে
সাগরের প্রাণী শঙ্খকে ঘিরে তৈরি হবে
শাঁখা ও সধবার মিথ;

কিন্তু এমন কেন হচ্ছে মা?
প্রাণ কেন পড়ে যাচ্ছে মুঠো উছলে!

জলে ডোবা গান
যে রয়েছে ব্যথার আড়ালে
যে গেয়েছে একাকীত্বের গান
থাকুক সে গহীনে নিবিড়
থাকুক সে একা এক তারা হয়ে দূরে উজ্জ্বল।

এইখানে ঝলমলে আলোর নিচে মিহি মিহি মোহনীয় অন্ধকার
সকলে সহাস্যে করেছে বরণ; যে পারে নি হাসতে অমন,
অভিমানে যে আছে টুইটুম্বুর, উৎসব হতে যে আছে দূরে
যে আছে ব্যথার আড়ালেঅনুজ্জ্বল একাকীত্বে ম্লান
গভীর ক্ষতের দিকে তারতাকানোর সময় তো নাই।

তবু মনে পড়ে গেলে আজ দিঘী ভরা শ্যাওলার দিন
মনে এসে গেলে আজ খয়েরি শালিকের গান
আমি টুপ করে ডুবে যাই পদ্মপাতার তলে
জলে ডুবে মনে মনে বলি বারবার
যে কথা চোখের সামনে বলি নাই।



===========
গৌতম চৌধুরীর গুচ্ছ কবিতা


তুমি আর আমি

.
কোনও প্রশান্তি বা আনন্দের জন্য নয়
যাতে সেই উদ্গত কূপের ভিতর নেমে যেতে পারি
ভূমিস্পর্শে লীন রে দিতে পারি এই অপচয়
তাই তোমাকে ডেকেছি
তুমি শুধু ধুলা বর্ষণ করো আমার উপরে
সমস্ত শরীর ধীরে ধীরে ঢেকে যাক গভীর আচ্ছাদনে
প্রতিটি রোমে যে-তড়িৎকণা স্ফূরিত হবার কথা ছিল
সেই অজাত সন্তানদের শোকে বিলাপ অশালীন
সত্য উন্মোচনে তুমি স্তম্ভিত হয়ো না
স্তম্ভিত হয়ো না পুনরুত্থানের স্বপ্নে
তোমার কাছে সোপর্দ করি যাচ্ছি আমার মায়াবী লন্ঠন  
   

.
মরা রোদের আলো সহসা এসে পড়ল তোমার মুখে
ঘাসে ঢাকা কত লেভেলক্রসিং পেরিয়ে এলাম
পিছনে পড়ে রইল নগর সংকীর্তনের দল
বালিগোলা আর পাঁউরুটি কারখানা আর
ছোট ছোট দোকানের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা মফস্বলের রাস্তা
কোনও গন্তব্য ছিল না আমার, যাচ্ছিলাম
হাওয়ায় উড়ে আসা এক চিরকুটে তুমি লিখেছিলে, শাস্তি
নাকের ডগায় ফড়িং নিয়ে ঘুমিয়েও পড়েছি অবেলায়
পরিকল্পিত দুঃস্বপ্ন, না কি স্বপ্নে পাওয়া কল্পনা
এই নিয়ে তর্কের মধ্যে
ঘামে ভেজা তোমার মুখ একবার দেখলাম, অস্পষ্ট

 




.
পথ বলে কি কিছু আছে? সবই প্রান্তর
দিগন্ত অবধি কুয়াসা বা হাহা রৌদ্র
দিগন্ত কই? কেবলই পিছিয়ে যাওয়া একটি রেখা
তবু, পায়ে পায়ে মানুষ নানাদিকে গিয়েছে, তুমিও গিয়েছ
পায়ে পায়ে তোমারও কি নিজস্ব পথ রয়েছে একটা
চোখের ওপর হাত আড়াআড়ি রেখে ভালো রে নজর করি
দূর দূর দিক অবধি তাকিয়ে ঠাহর করতে চাই তোমার পথ
তুমি বল, পথ না-বানালে নাকি পথিক হওয়া যায় না
আমি কি পথিক হতে চেয়েছি?
না কি হাঁটতে চেয়েছি শুধু
যেভাবেই হোক, পৌঁছাতে চেয়েছি তোমার কাছে


.
তুমি তো জান মাটির নিচে ঠিক কোথায় আছে জল
অথচ আভাসেও জানালে না সেকথা
এটা একটা নৈতিকতা হয়তো, এক ধরনের বিচারপদ্ধতি
এই সরলতা থেকে শূন্য হাতে আমাকে ফিরে যেতে হয়
হয়তো না-বুঝেই নিজেকে সঁপে দিই
মাংসকাটা একটা যন্ত্রের সামনে
উচ্চবাচ্য কর না
কর না যে, সেটা লক্ষ করি তবু কেন!
প্রত্যাশা মরে না কেন!
তোমাকে অবিশ্বাস করার জন্য এত যে উস্কানি দাও
আমার চোখমুখের চেহারাটা দেখেছ তুমি?







.
হাল্কা একটা সুতোর উপর দিয়ে দৌড়ে গেলে তুমি
পড়ে রইল তোমার পায়ের ছাপ
রোদে জলে ঝড়ে সেটাও থাকবে না এক সময়
তবু, কিছুক্ষণের জন্য যে রইল, তা- বা মন্দ কী
ফিরে ফিরে দেখি সেই ছাপ, ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি
মনে হয় নিজেকেই দেখি ওই পায়ের ছাপের করুণার ভিতর
যদি না যেতে, দেখা হত না সেসব
একটা নগ্ন সুতো টাঙানো থাকত আকাশের গায়ে
মুরুব্বিরা বলতেন, হাঁ রে কী দেখছ
ওই হল সময়


৬. 
তুমি হচ্ছ উদারপন্থার একশেষ
কোনওদিন বাতাসের মধ্যেও চালালে না তোমার অঙ্কুশ
অন্তত সাপের মতো একটা নীল রঙের আলো জ্বলে কি না, দেখা যেত
হিশ্রে একটা শব্দ হয় কি না...
সব কি আর বই পড়ে জানা যায়!
আমার পক্ষে তো চমৎকার ব্যাপারটা
আর এইখানটাতেই যত রাজ্যের তাত্ত্বিক আপত্তি তোমার
অথচ তুমিই বল কিনা
তত্ত্ব দিয়ে জীবনকে ব্যাখ্যা করা যায় না
দেখেছ তো, কেমন স্ববিরোধিতা ধরে ফেললাম তোমার
সত্যি রে বলো, এবার একটু একটু রাগ হচ্ছে কি না
জানি, গোস্বা হলেও দেখাবে না, মহত্ত্ব কমে যাবে তাতে
একটু যদি কমই মহত্ত্ব
কোরান-পুরাণ কী এমন অশুদ্ধ তাতে
অন্তত মাঝে মাঝে তোমায় ধরতে ছুঁতে পেতাম
একটু সমঝে চলতাম পথঘাট


.
নিশ্বাসের সাথে তুমি যে বাতাস টেনে নিচ্ছ অবলীলায়
তাতে কি ঝুঁকি নেই ভেবেছ?
আর কিছু না হোক, হঠাৎ রে গুচ্ছের পরাগরেণু
তোমার শ্বাসনালিতে ঢুকে ধুন্ধুমার কাণ্ড তো বাধিয়ে দিতে পারে একটা
উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই
বাঘ যেখানে জল খেতে আসে, আসতে হয় হরিণকেও
কে বাঘ, কে হরিণ, সেকথা অবান্তর
কথা যত বাড়তে থাকবে, বাড়তে থাকবে ঝুঁকি
তুমি কি তাই বলে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে বল নাকি চিরটাকাল!

অলঙ্করণঃ নাজিব তারিক




---------------------------------

হেলাল হাফিজের কবিতা দেয়াল

আমি না, আমরাও না
এ দেয়াল তোমার রচনা।
এ ভাঙ্গার টানেবান বুঝি ডেকেছে অন্তরে!
না না, থিতু হও, যে ভাবে আড়ালে আছো
দেয়ালের ওই পাশে ওই ভাবে নিরুদ্দেশ হও,
কখনো লাজুক মন উতলা উন্মুখ হলে
আমাকে উদ্দেশ্য না হয় বানিও তুমি

বিরহের টুকটাক কথা কিছু কও।


--------------
বিশ্বজিত চৌধুরীর কবিতা 
বৃষ্টি আর খরা

আয় মেয়েতোর্ শরীর জুড়ে বর্ষা-শাড়ি বুনে দিই
মেঘ জমিনে বিজলি আঁচল, বৃষ্টি বুটি গুনে দিই.

সাপের মত খাল উঠবে খলবলিয়ে
বইবে জোয়ার রক্ত শিরার মধ্য দিয়ে

তারপরে তুই আসিস নেমে আমার বুকের খরাতে
দেহের কালো নৌকা আমার আটকে আছে চরাতে।



-----------------

কৃষক এবং কৃষিবিদ ][ সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
---------------------------------------
ল্যাব-টিউবে ঘুমন্ত গম গবেষণার অসমাপ্ত উপন্যাস রেখে...
কৃষিবিদ জলপরীকে জড়িয়ে নিয়ে সুইমিং পুলের জলঘরে ডুবে ডুবে সাঁতার খেলেঘুমায়।
উপরেঊর্দ্ধে ঢেউসিঁড়ি সারি সারি মেঘ মার্চ করতে করতে চলে যায় অলস আকাশে।
বাতাসের সাথে বাতাসসন্ধি করেবন্ধি করে বন্ধনের সন্ধিঃক্ষণে রন্ধনের নান্দনিক গন্ধঘ্রাণ,
ঘ্রাণ আর রঙের নিজস্ব ভাষা নেই।



#
একজন কৃষক ষড়যন্ত্র বুঝেনা; বুঝে ষড়ঋতুর ঋতুবতী শষ্যের শরীর, মৃত্তিকার মন,
ষড়ঋতু মানে ছয় ভাইবোন, একান্নবর্তী এক হাড়িতে ছয় ভাইবোনের রন্ধন।
সে সুইমিং পুল চিনে না, জানে জলের জোয়ারভাটা।
পাঠ করে নক্সিমাঠের মন্ত্র, দেখে বজ্রবিদ্যুতের আকাশ, বাতাসের স্তন।
তার মুখস্ত বন্ধনের সন্ধিঃক্ষণে নান্দনিক রন্ধনের পূর্ব প্রস্তুতি এবং পূর্ব পুরুষ!
#
কৃষক কোনো কৃষিবিদ নয়; সে চাষী, জানে চাষবাসের ভাষা।
যে ভাষার বর্ণমালা নেই।
জুন ১৫, ২০১৪


=============================

আলফা পারভীনের গুচ্ছ কবিতা



হৃদয়হীন

আমার শরীরের ভেতরে একটা পিঁপড়া ঢুকেছে
সে হৃদয়টাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে
এক প্রান্ত থেকে খেতে খেতে চলছে হৃদয়ের অন্য প্রান্তে
একসময় হৃদয়টা খাওয়া শেষ হবে পিঁপড়াটার
আমি আজীবন বেঁচে থাকব হৃদয়হীন হয়ে...
.....................

পৃথিবীর বুকের ভেতর

অমীমাংসিত সময়ের জানালায়
জীবনটা যদি পাখি হয়ে বসতো
তবে তোমার হাত ধরে একবার
হেঁটে যেতাম পৃথিবীর বুকের ভেতর...
নদীর চোরাবালি কান্নার পথ কেটেছিল বলে
বুকের খাঁচাটা বেমালুম ভুলে গেল পথিকের কথা
পাখির কথাটা ভুলেছিল আর কিছু কাল পরে
মোচড়ানো স্মৃতির কোল ঘেঁষে বসে
হাপরের শব্দেকে নিঃশ্বাস ভেবে বেঁচেছিলাম
কান্নার মুখটা স্বযতনে তুলে এনে
সময়ের জানালায় ছড়িয়ে দিয়ে অপেক্ষায় আছি
জীবন পাখিটার দেখা পেলেই
তোমার হাত ধরে ঠিক হারিয়ে যাব
পৃথিবীর বুকের ভেতর পায়ের খোঁজে .

=======================



সরকার আমিনের কবিতা গুচ্ছকবিতা

নিউইয়র্কে বেহুলা
........................
........হয়তো হারিয়ে যাওয়া কন্যা তুমি, সাপে কেটেছিল, ভাসিয়ে দিয়েছিল জলে
....নিউইয়র্কের পর্নশালায়, প্রচুর খিস্তির পর তোমাকে খুঁজে পেয়েছে লখিন্দর
.কন্যাগো এখন তুমি পাশফিরে কোথায় যাবে, দেহবাজারইতো তোমার অন্দর
.....ম্যানহাটনের ব্যস্ত পিঁপড়েগুলোও জানে ব্যাপক বাঁচা বাঁচা-যায় প্রচুর অর্থ হলে!

এদিকে অপরাধবোধে ভুগছে নিস্পাপ সাপ, কেন সে না জেনে করেছিল দংশন
.....পাশাপাশি দাঁড়ানো ট্রেন, যাত্রীশূন্য ওয়াগন, নির্জন প্লাটফর্ম, ব্যর্থ জংশন
.বড়ো বড়ো দালান, কেন মনে পড়ে খালি লাল পিঁপড়া আর মাটির ঢিবি?
...................... .....কোন দিকে যাবে কন্যা , প্রবাসিনী বেহুলা বিবি?

ভাসানো হয়েছে কন্যারে জলে, যদি তারে খুঁজে পায় নবীন ওঝায়
আবদুল গফুরের দিন কাটছে হয়তো ছনের ছাদে গরু খোঁজায়!



কোথাও বিশ্বস্থ আগুন নাই
...................................................................
ওই যে নদীর পাড়ে ... আগুন জ্বলছে চিতায়....আসলে কে পুড়ে যাচ্ছে বলুন তো?
আগুনে পোড়ার সামান্য সুবিধা পেয়েছিল শ্রীমতি সীতা
আমিও সতী হতে চাই, তেমন যোগ্য আগুন কোথায় পাই?

ইলেকট্রিকের হিটারে জ্বলে যাবার মধ্যে তেমন কৃতিত্ব নেই
শর্টসার্কিট জীবনে ঝগড়া করে জ্বলে যাবার মধ্যেও নতুনত্ব নেই

পুড়ে যেতে আগ্রহী....নীল চিতায়.....
ঘুরে ঘুরে দেখেছি বার্ন-ইউনিট কোথাও বিশ্বস্থ আগুন নাই


শাহজাহানের চেয়েও ভাল প্রেমিক তাজমহলের নির্মাণ শ্রমিক
.............................................................................................
উচ্চাভিলাষ হচ্ছে একটা ত্রুটিপূর্ণ লন্চ, ঢাকা টু পটুয়াখালি, সামান্য ঝড়ে ডুবে যায়
হামজাও তাকে খুঁজে পায় না, তারচে ভ্রমণশীল কচুরি উত্তম
কেমন হেসে..... ভেসে চলে যায়..... শোনগো কচুরিপানা আমি তোমাদের দলে

ঢেউয়ের উপর পা তুলে বসে আছি, কোথাও যাবার কথা ছিল হয়তো
তরঙ্গের পর তরঙ্গ আসছে, শুশুকের মতো ডুবে যায় আশা
জানি কেবল, ভালবাসা ছাড়া আমার হারাবার মতো কিচ্ছু নেই
তাই ভয়ে ভয়ে তোমাকে ডাকাডাকি করি হে উড়ুক্কু পুত্র ইকারুস
আমাকে ধার দাও একটা সুললিত কাচের আকাশ, নিজেকে দেখি।

না বুঝে করেছি অহংকার বোকার মতো আমি বোধ হয় ভাল প্রেমিক
বুঝিনি শাহজাহানের চেয়েও ভাল প্রেমিক তাজমহলের নির্মাণ শ্রমিক।



=======================


জাহানারা পারভীনের কবিতা গ্রীষ্ম


কলার খোসার ভেতর জমিরে রাখা দিনগুলো হলুদ হয়ে গেছে..
ফিকে হয়ে গেছে সেসব দিনের গল্প…..
এত বছর পর আমি তাদের বর্নমালা, বাক্য, অক্ষর আর হলুদ মলাটে
হাত বুলিয়ে দেখি... তারা আমার  প্রথম স্কুলের দিনের মত সংক্ষিপ্ত
আয়ু নিয়ে জন্মেছে; আজ বলতে দিয়ে দেখি জল জল আর জল
চোখের  স্রোত থেকে জন্মানো নদীর
হলুদ জলে যেসব মরা প্রজাপতি এসছিল নাইতে
তাদের কোনো তৃষ্ণা মেটেনি, যদিও তারা মরা গাঙের উদাহরন টেনে বলেছিল
কোনো এক গ্রীষ্মে আমি বর্ণমালার ভেতর খুজে পাব আমার কংকাল
গুপ্তধন মনে করে  সেই  নকশার নির্দেশনায় মাটি খুড়ে জঙ্গলের,
দেখি পৌছে গেছি অন্য এক দেশে যেখানে আমার এত এত দিন
আর রাতের কোনো চিহ্ন নেই, যারা স্বাক্ষ্য দিয়ে গেছে একদিন
সব অবসাদ, অবহেলা আর  অভিবাদনের কাছে তাই  বলে যেতে চাই
কোনো এক গ্রীষ্মে আমাদের গ্রামের ঝরে পরা হলুদ পাতারা এক হয়ে
জ্বলে উঠে যে আগুন, যে ধোয়ার জন্ম দিয়েছিল, সেই ধোয়ার কুন্ডলী থেকেই
জন্ম নিয়েছিল এক একটি হলুদ দিনের হালখাতা....

=======================


আহমেদ স্বপন মাহমুদের কবিতা



একটা ঘুম উড়ে গিয়ে ছাদে বসল
আমার কোনো ছাদ নাই।

একটা মেয়ে হাসি মারল
থেমে গেল যাত্রীবাহী যান
ছেলেটাও খান খান

খুন হয়ে গেল।

শীতলক্ষ্যাও উদরে পেল কত লাশ
রক্তের আকাশ।

তোমাদের কোনো আকাশ নাই
আসমানে তাকানোর কোনো উপলক্ষ নাই
যক্ষের ধন সব আঁকড়ে আছে
আকাশে পাতালে
স্বৈরজালে সব লোলুপতা
অসীম ক্ষমতা যার

মেয়েটার হাসি গুম হয়ে গেল।

আমারার ঘুম নাই কত বহু দিন
চিন চিন ব্যথা বাজে কিছু কহি না
আমরা হাসি না বহুকাল মা
স্রোতের উদরে আর লাশ ধরে না।

একটা লাশ উড়ে গিয়ে বাতাসে খেলছে
আমাদের চোখ নাই কিছু দেখছি না। 

ছেলেটাও খান খান
খুন হয়ে গেল
মেয়েটার হাসি গুম হয়ে গেল।

=======================





স্বর্গ কুমারী ][ শাহীনা কবির

রুপাঞ্জেল, স্বর্গকুমারী তুমি, তোমার দীঘল চুলে
প্রভাত সূর্য গড়িয়ে পড়ে লুটোপুটি খেলা করে,
তুমি কেশ এলিয়ে বন পথে হেঁটে বেড়াও যখন
বুনো ফুলেরা চুলের সুগন্ধি হতে তোমার পায়ে পড়ে।

তোমার ছড়ানো কেশকে কালো মেঘ ভেবে
চাতক ভুল করে,উড়ে এসে তার পথ হারিয়ে ফেলে
লজ্জা পেয়ে আকাশের যত মেঘ ছুটতে থাকে
ভেসে ভেসে অবশেষে আশ্রয় নেয় হীমালয় কোলে।

সন্ধ্যা হলে আর তারাদল আকাশে থাকেনা
অস্থির হয়ে ওঠে তোমার গহীন চুলের লোভে
তারাফুল হয়ে নিজের জীবন ধন্য করতে চায়
প্রজাপতিরাও ডাক পেয়ে যায় সে ফুলের,অনুভবে।। 

=======================


                              

                                    শূন্য ][ মাসুদ খান

নিখিলের হঠাৎ-বিগড়ে-যাওয়া সে-কোন গোপন সংখ্যামেশিনের থেকে
অচেনা অসুখের মতো, অজ্ঞাত গজবের মতো গলগল করে বেরিয়ে আসছে সব শূন্য।

সাধের মেশিন থেকে আশা ছিল বেরিয়ে আসবে কত-না বিচিত্র অঙ্ক আর সংখ্যা
আর ভরে যাবে এই দুখিনী দুনিয়া! তা নয়, কেবলই শূন্য।
তা-ও শূন্যগুলি সব দশমিকের ডানে বসা একটানা শূন্যের সিরিজ--
অর্থহীন উদ্বৃত্ত বন্ধ্যা ও হাহুতাশময়!

এক মহামেশিনের বিপুল ববিন থেকে, গোপন ও প্রকাশ্য সব স্লট থেকে
চিরতরে ছাড়া পাওয়া যেইমতো মাইল-মাইলব্যাপী সুতার বহর
সেইমতো এইসব খরস্রোতা শূন্যের নহর...

অন্য কোনো অঙ্ক নাই সংখ্যা নাই শুধু শূন্য উপচে উপচে আসা
লাফাংগার মতো লাফাতে লাফাতে আর গড়াতে গড়াতে আসা
বহরে বহরে পাতা আর পাতার বাহার করতে করতে আসা
ইঁদুর ও ভোঁদড়ের ভঙ্গি ধ’রে লীলা আর লাস্য করতে করতে আসা
চিকা আর চামচিকার মতো হাস্য ও রহস্য করতে করতেই
দিলমে চাক্কুমারা পাগলা ও ভোলাভালা হাক্কু ও হাহাকার করতে করতে আসা
দশমিকের ডানে-বসা কানে-ঠসা কালা-নুলা নেলাফেলা খাটাশ-খবিশ নষ্ট-ভ্রষ্ট
ডাশা-ডাশা যত শূন্যের দল ভয়াবহ শূন্যের কাফেলা..............................
আর ওই যে বিকট বেঢপ অতিকায় এক শূন্য,
ওটাই পালের গোদা, আন্ধা-কালা কাফেলাসালার...

এসব কি স্রেফ বিগড়ে-যাওয়া সেই গূঢ় মেশিনের ঋতুবিভ্রাট!
দশমিক-পরবর্তী শূন্যের প্রবাহ হয়ে মহাশূন্য ভরে ফেলছে ক্রমে

এমনিতেই জড়ের দুর্বহ দায়ভার
তদুপরি শূন্যের শাসন, অত্যাচার
কোথায় পালাবে তবে প্রাণ!
প্রাণী সব করে রব, ভয়ে--
বদ্ধ ও তটস্থ প্রাণিকুল
ফাজা আলাহুম কা’স ফিম্মাকুল।

ইতিমধ্যেই যে শূন্যস্থানগুলো তৈরি হয়ে আছে
সেগুলো তো পূরণ হচ্ছেই না, বরং তৈরি হচ্ছে নতুন-নতুন শূন্যস্থান
মহাশূন্য আরো মহা শূন্য হচ্ছে...

অবশেষে একসময় শূন্যস্থান দিয়েই, যাঃ, পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে
খসখসে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা, দিনদুনিয়ার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন